পাথারকান্দি ফাকুয়া ও কানাইনগর জিপিতে এসআর যাচাই প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ গরমিলের অভিযোগ কংগ্রেসের

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি। 
বরাক তরঙ্গ, ৯ ডিসেম্বর : পাথারকান্দি ব্লকের ফাকুয়া ও কানাইনগর জিপিতে এসআর যাচাই ও নাম নথিভুক্তকরণ এ ব্যাপক অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই বিশেষ সার্ভে বা এসআর প্রক্রিয়ায় শাসক দলের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। এনিয়ে সোমবার রাতে পাথারকান্দি ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি যাদবেন্দু সিনহা। তিনি অভিযোগ করেন, ফাকুয়া ও কানাইনগর জিপির একাধিক ওয়ার্ডে এসআর–এর নথিপত্র যাচাই প্রক্রিয়ায় এমন সব গরমিল ধরা পড়েছে যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।

সিনহা জানান, বিশেষ করে ১৯৮ নম্বর ফাকুয়া গ্রাম এইচএস স্কুল (দক্ষিণাংশ) ভোটকেন্দ্রের একাধিক হোল্ডিংয়ে অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর সংখ্যক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার বাস্তব তথ্যের সঙ্গে সামান্যতম মিল নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি তিনটি হোল্ডিং নম্বর তুলে ধরেন ৮ নং হোল্ডিং : যেখানে প্রকৃতপক্ষে মাত্র ৪–৫ জন সদস্যের পরিবার, সেখানে যুক্ত করা হয়েছে ২৫ জনের নাম। ৯ নং হোল্ডিং (বিধুভূষণ দাসের পরিবার) : প্রকৃত সদস্য মাত্র ৫ জন, অথচ নথিতে অন্তর্ভুক্ত ৩০ জন। ১২ নং হোল্ডিং (রবীন্দ্র দাসের পরিবার) : মোট সদস্য ৩ জন, অথচ নাম ঢোকানো হয়েছে ২৯ জনের। ব্লক সভাপতি দাবি করেন এসব নামের অধিকাংশই স্থানীয় নয়। অনেকেই বর্হিরাগত কিংবা সন্দেহভাজন বিদেশি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার কথায় বাস্তব পরিবারে ৩–৫ জন, আর কাগজে ২৫–৩০ জন! প্রক্রিয়ার ভয়াবহ অপব্যবহার না হলে এমনটা হওয়া সম্ভব নয়।কংগ্রেসের দাবি, শুধু সদস্য সংখ্যার গরমিলই নয়, বহু ক্ষেত্রে হোল্ডিং নম্বরই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকানা যাচাই না করেই যেভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা পুরো এসআর প্রক্রিয়াকেই সন্দেহের তালিকায় ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন নেতারা।

যাদবেন্দু সিনহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমাদের ছেলে-মেয়েরা কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে—তাদের ক্ষেত্রে স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলে নাম অন্তর্ভুক্ত হয় না। অথচ যারা স্থানীয় নন, এমন বর্হিরাগত বিদেশিদের নাম অতি সহজে নথিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে! এটা কিভাবে সম্ভব?এদিকে এবিষয়ে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ারম্যান শাহাদত আহমেদ চৌধুরী সাময়িক প্রসঙ্গ কে বলেন ফাকুয়া ও কানাইনগর জিপিতে এসআর যাচাইয়ের নামে যে ভয়াবহ অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরা পড়েছে, তা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয় এটি পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে বিকৃত করার অপচেষ্টা। এক পরিবারের প্রকৃত সদস্য ৩–৫ জন, কিন্তু নথিতে ২৫–৩০ জন করে বর্হিরাগতদের নাম ঢোকানো একে কোনওভাবেই ভুল বা ত্রুটি বলা যায় না; এটি একটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র। ভোটার তালিকাকে প্রভাবিত করে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের এই নোংরা খেলা আমরা বরদাস্ত করব না। করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস এ বিষয়ে শীঘ্রই কঠোর অবস্থান নেবে এবং প্রয়োজন হলে গণআন্দোলনেও নামতে প্রস্তুত।ঘটনার দ্রুত তদন্ত চেয়ে কংগ্রেস জানায়, তারা খুব শীঘ্রই জেলা আয়ুক্ত, সম-জেলা আয়ুক্ত, সার্কেল অফিসার ও ইআর দপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ ও স্মারকলিপি জমা দেবে। তাদের দাবি এসআর প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে ভোটার তালিকা প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। সাংবাদিক সম্মেলনে ব্লক সভাপতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শামীম আহমদ, দেবাশিস নাথ, অনিল সিনহা, রিপন শুক্লবৈদ্যসহ আরও অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *