আধার কার্ড : প্রতিবন্ধকতার সমাধান না করলে আন্দোলনের হুমকি বিডিএফের
বরাক তরঙ্গ, ২৫ ফেব্রুয়ারি : এনআরসি প্রক্রিয়ার সময় যাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়েছিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার চার বছর পরও তাদের একাংশের আধার কার্ড সরকার ঝুলিয়ে রেখেছে। এর প্রতিবাদে শিলচর পেনশনার্স ভবনে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট আহুত সভায় সুচিন্তিত মতামত জানালেন উপত্যকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
শিক্ষাবিদ নিরঞ্জন দত্তের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিডিএফ আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, এনআরসি প্রক্রিয়ায় দাবি আপত্তি পর্যায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারটি এসওপিতে সন্নিহিত হয় রাজ্য সরকারের নির্দেশে। সুপ্রিম কোর্টের এ ব্যাপারে কোন লিখিত নির্দেশ ছিল না। তিনি বলেন, তখন বলা হয়েছিল চূড়ান্ত এন আর সি তালিকা প্রকাশ হওয়া অবদি এই তথ্যকে তালাবন্ধ করে রাখা হবে। যেহেতু চূড়ান্ত তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে,যার স্পষ্টীকরণ দিয়েছেন স্বয়ং আরজিআই তাই এই বায়োমেট্রিক তথ্য আটকে রাখা বেআইনি। তাই সরকার আধার কার্ড জনিত সমস্যা সমাধান করতে দায়বদ্ধ।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী রঞ্জনকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, বরাক উপত্যকার যাদের কার্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তাঁদের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দাবি তুলুক বিডিএফ। অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত বলেন, একই রাষ্ট্রে দুই ধরনের নাগরিক থাকতে পারেন না। সমস্ত নাগরিকের সমধিকার থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে আমাদের সংবিধান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আধার কার্ড না দিয়ে কিছু নাগরিকদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তাঁরা রেশন পাচ্ছেন না, ব্যাবসার অনুমতি পত্র পাচ্ছেন না, ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে পারছেন না, সরকারি স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাচ্ছেন না। যদি তাই হয় তাহলে সরকার উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে বলুক যে তাঁরা বৈধ নাগরিক নয়। অন্যথা এই অসাম্য সম্পুর্ন অসাংবিধানিক। তিনি বলেন যারা ভোট দিচ্ছেন আইনত তাঁরা সবাই এই দেশের বৈধ নাগরিক। তাই অবিলম্বে একাংশের আধার কার্ড জনিত প্রতিবন্ধকতার সমাধান করতে হবে সরকারকে।
সিপিএম দলের এর পক্ষ থেকে এদিন উপস্থিত সমীরণ আচার্য বলেন যে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছে যে সরকারি নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সেই নির্দেশ পালিত হচ্ছে না। তিনি বলেন এই বেআইনি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ফোরাম ফর স্যোসাল হারমনির পক্ষ থেকে অরিন্দম দেব বলেন তাঁরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী, আরজিসিআই সহ রাজ্য সরকারকে স্মারক লিপি দিয়েছেন এবং আগামী ১৭ মার্চ এই ইস্যুতে বরাক উপত্যকা ভিত্তিক একটি কনভেনশন আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমাজ কর্মী কমল চক্রবর্তী বলেন, এখনো প্রচুর ডি নোটিশ জারি হচ্ছে। যাদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলায় ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই আর্থিক ভাবে দুর্বল। এদের করুণ অবস্থার কথা এদিনের বক্তব্যে তুলে ধরে তিনি বলেন আধার কার্ড জনিত সমস্যার জন্য দায়ী সরকার। তাই এর সমাধানও সরকারকেই করতে হবে।
আলোচনা ক্রমে এদিনের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে এন আর সি র সময় যাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়েছিল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের সবার আধার কার্ড জনিত প্রতিবন্ধকতার সমাধান করার দাবি জানিয়ে আর জি সি আই, কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারকে স্মারক লিপি দেবে বিডিএফ। যদি তা বাস্তবায়িত না হয় তবে পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই দলের পক্ষ থেকে রফিক আহমেদ, মাতৃভাষা ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে সুনীল রায়, মার্চ ফর সায়েন্স এর পক্ষ থেকে কৃশানু ভট্টাচার্য ও সাংবাদিক চয়ন ভট্টাচার্য। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় সহ বিএন এস এর পক্ষ থেকে দেবাশিড পাল,অভিজিৎ ঘোষ, সজল নাথ, দেবায়ন দেব, নবারুণ দে প্রমুখ। বিডিএফ এর পক্ষ থেকে হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।