কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর জন্মদিন পালন বরাকবঙ্গের

বরাক তরঙ্গ, ২২ এপ্রিল : বরাক উপত্যকার শ্রেষ্ঠ কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর ৮৮ তম জন্মদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় শিলচর বঙ্গভবন গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে রাত প্রায় সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর অনুরাগীরা ভিড় করে বৈঠকী মেজাজে স্মৃতিচারণ, আলোচনা, কবিতা পাঠ এবং গানের মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করেন।

সংগঠনের কাছাড় জেলা সমিতির সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচিমুখ তৈরি করে দেন। জেলা সমিতির সভাপতি প্রাবন্ধিক সঞ্জীব দেবলস্কর স্মৃতিচারণ করে বলেন, শক্তিপদ ব্রহ্মচারী শেষ জীবনে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশে যেতে চাইতেন। তখন একবার বাংলাদেশে গিয়ে তিনি তাঁর ফেলে আসা বাড়িতে যে আতিথেয়তা পেয়েছিলেন তাঁকে তার গল্প করেছিলেন। পুরনো বাড়ির নতুন মানুষটি কবিকে বাসে তুলে দিয়ে এমন অঝোরে কেঁদেছিলেন, তা ছিল কবির কাছে এক মানবিক অভিজ্ঞতা। অনুষ্ঠানে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেন্দু দাশ জীবনানন্দের রূপসী বাংলার সঙ্গে শক্তিপদর কবিতার তুলনা করে তাঁর বিশেষ স্বাতন্ত্রকে তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে কবির মনসামঙ্গল এবং উদ্বাস্তুর ডায়েরি কবিতার বিশেষ পর্যালোচনা করেন।

কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর জন্মদিন পালন বরাকবঙ্গের

বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেন, কীভাবে জিসি কলেজে পড়ার সময় কলেজের মুখপত্র পূর্বশ্রী সম্পাদনা করতে গিয়ে কবির সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলেন।  শক্তিপদ ব্রহ্মচারী এবং বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য কাছাড় সাহিত্য পরিষদ গঠন করে উপত্যকার সাহিত্যচর্চা এবং ভাষা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করেছিলেন এবং বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের জন্মের পর তাঁরা পরিষদকে যে সম্মেলনের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন সেই ইতিহাস তুলে ধরেন। বরাকের বাঙালির আত্মপরিচয় রক্ষার জন্য শেষদিন পর্যন্ত শক্তিপদ এই সংগঠনের সভাপতি রূপেও আপসহীন লড়াই করে গেছেন।

প্রতিস্রোত লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদক কবি সুজিৎ দাস তাঁর পত্রিকায় প্রকাশিত শক্তিপদর দুটো গদ্য পাঠ করে শোনান। এছাড়া আমাদের সমকাল ম্যাগাজিনের সম্পাদক কবি  স্নিগ্ধা নাথ শক্তিপদর কবিতায় নারীর উপস্হিতিকে নিজের পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করেন। উজ্জ্বল পান্ডুলিপি ম্যাগাজিনের সম্পাদক কবি তমোজিৎ সাহা কবির কবিতায় সময় ও সমাজ সম্পর্কে বলেন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবির বলিষ্ঠ অবস্হান ব্যাখ্যা করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি শক্তিপদ ও বিজিৎকুমারের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে শিলচরে অনুষ্ঠিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সম্মেলনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং আবুল বাশার প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন।

এদিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী সঞ্জয় দেবলস্কর, আবৃত্তিকার অমিত শিকিদার, শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র দাস, লেখক ও বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক দীপক সেনগুপ্ত প্রমুখও কবির সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। দীপক সেনগুপ্ত জানান, কয়েক মাসের মধ্যেই সংগঠনের তরফে বরাক উপত্যকায় অনুষ্ঠিত হবে শক্তিপদ ব্রহ্মচারী কবিতা উৎসব এবং মুজতবা আলী সাহিত্য উৎসব। অনুষ্ঠানে শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর কবিতা পাঠ করেন আদিমা মজুমদার, মানসী নন্দী, মৃদুলা ভট্টাচার্য, নিম্মি চক্রবর্তী, মৌটুসী বিশ্বাস, সব্যসাচী পুরকায়স্থ ও শান্তশ্রী সোম। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সীমা পুরকায়স্থ ও কৌশিকী ভট্টাচার্য। কৌশিকী কবির মনসামঙ্গল কবিতাটির কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য কৃত সঙ্গীতরূপটি পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা সমিতির সাহিত্য সম্পাদক শান্তশ্রী সোম। প্রসঙ্গত, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের তরফে প্রতি বছর শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর জন্মদিবস উদযাপন করা হয়।

Author

Spread the News