মুখ্যমন্ত্রীর অসাংবিধানিক ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের নিন্দা বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের

বরাক তরঙ্গ, ৩০ আগস্ট : কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সম্প্রতি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন যে অসমকে কোন অবস্থায় মিঞা ল্যান্ড বানাতে দেবেন না। এবং এও বলেছেন যে নিম্ন অসমের মুসলমান অধিবাসীরা যদি উজান অসমে যান বা থাকেন তবে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। উল্লেখ্য, একটি কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে উজান অসমের ত্রিশটি সংগঠনের যৌথমঞ্চ মুসলমান জনগোষ্ঠীর লোকদের সাতদিনের মধ্যে উজান অসম ছাড়ার ফতোয়া দিয়েছে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক এবং এমন অসাংবিধানিক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্ট।

এক প্রেস বার্তায় যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন, জীবন জীবিকার তাগিদে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যে কোন মানুষ যেতেই পারেন, এ অধিকার সংবিধান প্রদত্ত। কিন্তু একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁর রাজ্যের নাগরিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না দিতে পারেন তবে এটা তাঁর চূড়ান্ত ব্যার্থতা। এবং এটাও মনে রাখতে হবে তিনিই এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই এই ব্যার্থতার দায় নিয়ে অবশ্যই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত এবং তাঁরা যুবফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই দাবি জানাচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর অসাংবিধানিক ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের নিন্দা বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের

কল্পার্নব বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে ভুল তথ্য পরিবেশন করছেন। তৎকালীন অসমে চা বাগানের শ্রমিকদের খাবারের যোগান না থাকায় চাষাবাদের জন্য বৃটিশরাই প্রথম  ময়মনসিংহ থেকে মুসলমানদের অসমে আসতে প্ররোচিত করে। এরপর থেকে চর চাপরি অঞ্চলের এইসব মানুষেরা প্রচন্ড পরিশ্রম করে আসামে চাষাবাদের শুরু করেন। মৎসচাষও শুরু হয়। এইভাবে আজ অবধি তাঁরা শ্রম দিয়ে অসমের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে আসছেন, অসমের স্বনির্ভরতায় এদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই এরা মোটেই বহিরাগত নন, এই রাজ্যের ভুমিপুত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর অসাংবিধানিক ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের নিন্দা বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের

বিডিওয়াইএফ এর মুখ্য আহ্বায়ক আরও বলেন, প্রব্রজনের মিথ্যা ভয় ছড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলছেন ভোটের স্বার্থে। অথচ আশির দশক থেকেই উল্টে অসম থেকে ক্রমাগত বাঙালিদের প্রব্রজন চলছে। আশির দশকের বঙাল খেদা আন্দোলনের পর বৃহৎ সংখ্যক বাঙালিদের এই রাজ্য ছেড়ে পালাতে হয়েছে। নেলি, গহপুর হত্যাকাণ্ডের পরও বসতভিটা ছেড়ে বহুলোক অসম ছেড়েছেন। এমনকি এখনও এই রাজ্যে চাকরি বা জীবিকার কোন সংস্থান না থাকায় যুবক যুবতীরা অন্য প্রদেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, অসম একটি বহুভাষিক রাজ্য। একজন মুখ্যমন্ত্রীর উচিত রাজ্যের সমস্ত জনগোষ্ঠীর আস্থা নিয়ে রাজ্যকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই একজন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের বিভাজনের উস্কানি, সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিরোধীদলীয় ঐক্যমঞ্চ এই ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই ব্যাপারে আদালত ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুবিচারের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বিডিওয়াইএফের পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

Author

Spread the News