দিপু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গর্জে উঠল বাজরিছড়া, দাহ ইউনুসের কুশপুতুল

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২১ ডিসেম্বর : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সনাতনী যুবক দিপুচন্দ্র দাসের নৃশংস ও বর্বর হত্যাকাণ্ডে গোটা উপমহাদেশ জুড়ে নেমে এসেছে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া। এই নির্মম হত্যার প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের দাবিতে গর্জে উঠল শ্রীভূমি জেলার বাজরিছড়া। মশালের আগুন, প্রতিবাদী স্লোগান আর মানুষের আবেগী কণ্ঠে স্পষ্ট হয়ে উঠল একটাই বার্তা বাংলাদেশ সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আর নীরব থাকা নয়।স্থানীয় সনাতনী সমাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন অগণিত সাধারণ মানুষ, যা পরিণত হয় এক শক্তিশালী গণপ্রতিবাদে। রবিবার সন্ধ্যায় কালাছড়া হাসপাতাল রোডের শহিদ বেদীর সামনে থেকে একটি মশাল মিছিলের সূচনা হয়। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে নারী–পুরুষ–যুবক–বৃদ্ধ নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই পদযাত্রায় শামিল হন। মিছিলটি “ইউনুস সরকার হায় হায়”, “দিপু হত্যার বিচার চাই”, “হিন্দু হিন্দু ভাই”, “মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ হুঁশিয়ার” সহ একাধিক তীব্র স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।মশাল মিছিলটি গোটা বাজার এলাকা পরিক্রমা করে প্রথমে বাজরিছড়া থানার সম্মুখস্থ তেমাথায় পৌঁছায়। পরে সেখান থেকে বাজারের প্রাণকেন্দ্র মাকুন্দা রোডে এসে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। সভার শুরুতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এ সময় উপস্থিত জনতা আবেগাপ্লুত হয়ে বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেকের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান।

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্থানীয় সনাতনী সমাজের পক্ষে জয়দীপ পাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “গত বৃহস্পতিবার আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু যুবক দিপুচন্দ্র দাসকে প্রথমে নির্মমভাবে পিটিয়ে আধমরা করা হয় এবং পরে তাঁকে ঝুলিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির কাছে একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের মদতপুষ্ট সরকার। এই সরকারের ছত্রছায়াতেই এ ধরনের নারকীয় ঘটনা ঘটছে।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালানো হলেও মানবাধিকার সংগঠন এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, দিপু দাসের অপরাধ কী ছিল যে তাঁকে এমন নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো? যদি তাঁর কোনো দোষ থেকেও থাকে, তবে কেন তাঁকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হলো না? কেন প্রকাশ্যভাবে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো—এই প্রশ্নই আজ গোটা সনাতনী সমাজের।প্রতিবাদ সভা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে একাধিক জোরালো দাবি উত্থাপন করা হয়। বক্তারা দাবি জানান, সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে একটি অংশ সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হোক। পাশাপাশি, যদি তা সম্ভব না হয়, তবে বাংলাদেশের মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী আগ্রাসন থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে ভারতীয় সেনা পাঠানোর দাবিও জানানো হয়।সভায় অন্যান্য বক্তারাও ইউনূস সরকার ও উগ্র মৌলবাদকে নিশানা করে তীব্র ভাষায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পুরো কর্মসূচি জুড়ে ছিল ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচারের জোরালো আহ্বান। শান্তিপূর্ণ হলেও প্রতিবাদ ছিল দৃঢ়, স্পষ্ট ও বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে বাজরিছড়ার সনাতনী সমাজ স্পষ্ট বার্তা দিল সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তারা নীরব থাকবে না, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *