বৈঠাখাল এমই স্কুলে সম্প্রদায় উৎসব : সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ঐক্যের মনোমুগ্ধকর মেলবন্ধন

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১০ ডিসেম্বর : পাথারকান্দির বৈঠাখাল এমই স্কুল প্রাঙ্গণ পরিণিত হয়েছিল এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক মিলনমেলায়। স্কুলে আয়োজিত এই সম্প্রদায় উৎসব শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং স্থানীয় সমাজ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের একত্রিত করে ঐক্য, সংস্কৃতি এবং শিক্ষার গুরুত্বকে আরও একবার দৃঢ়ভাবে তুলে ধরল।অনুষ্ঠানের সূচনা হয় স্কুলের স্থায়ী শহিদ বেদী ও বিদ্বৎজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর–এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্পণ ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে। প্রধান শিক্ষক অপূর্ব দে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দেশাত্মবোধক গানের সুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্চ উন্মুক্ত করেন। এরপর একে একে আমন্ত্রিত অতিথিদের আন্তরিকভাবে বরণ করে নেয় বিদ্যালয় পরিবার।উৎসবে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেনরাধাপ্যারী জেলা পরিষদ সদস্যের প্রতিনিধি শিশির সিনহা, বৈঠাখাল জিপি সভাপতি মণিরাজ কুর্মি, আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্যের প্রতিনিধি শম্ভু নাগ, প্রাক্তন শিক্ষক ও সমাজসেবক নব কুমার সিনহা, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ, সমাজসেবক অনন্ত মোহন সিনহা, হীরালাল যাদব, পান্না গোপ, বিধুভূষণ চন্দ, শিক্ষক হোসাইন আহমদ, কবীর আহমদ, কল্পনা চক্রবর্তী, সুপর্ণা নাথ প্রমুখ। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক অপূর্ব দে সম্প্রদায় উৎসবের সামাজিক ও শিক্ষামূল্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন—শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি অতিথি ও অভিভাবকদের অবহিত করেন এবং বলেন, “যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন বিদ্যালয়ের উন্নয়নে আমি অটল, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় ও চরিত্রগঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।জি পি সভাপতি মণিরাজ কুর্মি তাঁর বক্তব্যে রাজ্য সরকারের শিক্ষা উন্নয়ন–সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি আশ্বাস দেন বৈঠাখাল এমই স্কুলের সার্বিক অগ্রগতিতে তিনি সর্বদা পাশে থাকবেন।এছাড়া বক্তব্য রাখেন নবকুমার সিনহা, অনন্ত মোহন সিনহা, হীরালাল যাদব প্রমুখ যাঁরা প্রত্যেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, সামাজিক সংহতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেন। দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নানান সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

নৃত্য, গান, আবৃত্তি—সবকিছুতেই শিশুদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও প্রতিভা দর্শকদের মন জয় করে নেয়।অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন।সুরুচিতা রায়, মালতী বিন, সরস্বতী বাল্মীকদাস, অনুশ্রী পাল, সুদীপ্তা রায়, রাজশ্রী চন্দ, রিয়া ব্যানার্জি, মাহি সিনহা, রাতুল পাল প্রমুখ।বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীরাও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন। এটি বিদ্যালয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসারই প্রতিফলন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষিকা বেলারানি নাথ, শিক্ষক আবু সুফিয়ান, স্কুল পরিচালনা সমিতির সভাপতি মোহিতলাল বৈদ্য, উপ-সভানেত্রী প্রতিমা তেলেঙ্গা, সদস্য মখলিসুর রহমান, সনাতন তাঁতী, সুধীর বৈষ্ণব প্রমুখ।সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের অসমিয়া ভাষা শিক্ষক বিনয় দাস। তার সুষ্ঠু সঞ্চালনা অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।অনুষ্ঠান শেষে অতিথি, অভিভাবক ও পড়ুয়াদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজনের চমৎকার ব্যবস্থা ছিল। একসঙ্গে বসে খাবার গ্রহণের মধ্যে দিয়ে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *