পুজো মণ্ডপে দলবদ্ধভাবে বাংলায় লেখা ব্যানার ছেড়া, হুমকি প্রদান অশণি সংকেত : বরাকবঙ্গ

বরাক তরঙ্গ, ২৫ অক্টোবর : এ বছর শান্তি ও সম্প্রীতির আবহে গোটা রাজ্যে সব জনগোষ্ঠীর মানুষ যখন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় দুর্গাপূজো ও শারদ উৎসব উদযাপন করেছেন ঠিক সে সময়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে পূজা মণ্ডপগুলোতে দলবদ্ধভাবে হানা দিয়ে বাংলায় লেখা ব্যানারগুলো টেনে ছিড়ে ফেলে হুমকি দিয়ে যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে তা এক অশনি সংকেত বলে মনে করছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। রাজধানী গুয়াহাটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় সংগঠিত ঘটনা প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে সম্মেলন বলেছে, এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে এসব কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। নেপথ্য প্ররোচনায় পরিকল্পিতভাবেই এসব কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

রাজ্যের শুভচিন্তকদের এগিয়ে আসার আহ্বান_____

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যখন ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’এই অভয়বাণী বারবার উচ্চারণ করা হচ্ছে, যখন সনাতন ধর্ম সুরক্ষার কথা বলা হচ্ছে, তখন শাস্ত্রীয় বিধিনিয়ম মেনে আয়োজন করা দূর্গাপূজোর মন্ডপগুলোতে একশ্রেণীর উগ্র ভাষাপ্রেমী যেভাবে অসংযমী মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা বিস্ময়কর। প্রশাসনের নকদর্পণে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বাংলাভাষী ধর্মপ্রাণ জনমণ্ডলী এখন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।

অসমিয়া এক সমৃদ্ধ ভাষা এই মন্তব্য করে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বিবৃতিতে বলেছেন, পুজো মণ্ডপগুলোতে গুটিকয়েক বাংলা শব্দের ব্যানার টাঙ্গালে তা বাংলা ভাষার আগ্রাসন প্রয়াস এমনটা বলা যুক্তিশীল মনের পরিচায়ক নয়। এটাকে অজুহাত করে বাংলা ভাষায় ব্যানার, সাইনবোর্ড লিখে টাঙ্গালে ‘দেখে নেওয়া হবে’ এ ধরনের হুমকি অসহনশীল মানসিকতারই চূড়ান্ত প্রকাশ। অসম এক বহুভাষিক, বহু সংস্কৃতির সমন্বিত রাজ্য। এখানে সব জনগোষ্ঠীর মানুষ যখন সম্প্রীতির বন্ধনে রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য নিজ নিজ পরিসরে কাজ করে চলেছেন তখন বিভিন্ন অজুহাতে বাঙালি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি চর্চাকে অবদমন করে তার আত্মপরিচয় বিলুপ্ত করার উদ্যম  লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলা এ রাজ্যে নিষিদ্ধ ভাষা নয় এবং এই ভাষায় চর্চা করার সংবিধানসম্মত অধিকার বাঙালিদের রয়েছে একথা উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বিবৃতিতে বলেছেন, এটা প্রত্যেকেরই স্মরণ করা উচিত, অসমিয়া ভাষা -সংস্কৃতির বিকাশে এ রাজ্যের বাঙালিদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে এবং সে ধারা আজও অব্যাহত। অসমিয়াভাষী বোদ্ধাজনও বাংলা সাহিত্য-সংষ্কৃতির উৎসাহী পাঠক, মনোগ্রাহী শ্রোতা।

বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক দত্ত আরও উল্লেখ করেছেন, অসমিয়া জাতির বিহু উৎসব উদযাপনে সর্বত্রই অসমিয়া ভাষায় ব্যানার টাঙ্গানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত  দেশের কোথাও ওই ব্যানার টেনে ছিড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। বরাক উপত্যকার তিন জেলায় আয়োজিত বিহু উৎসবের দিনগুলোতেও এমনতরো ঘটনার কোনও নজির নেই। যখন এ রাজ্যে বেসরকারি স্তরে পঠন-পাঠনে পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের মধ্যে অসমিয়া এবং বাংলা বিমুখতা দিন দিন বাড়ছে এবং দুটি ভাষাই যখন বিপন্ন , তখন বাস্তব চিত্র অনুধাবন না করে কিছু হঠকারী ব্যক্তি ও সংগঠন বাংলা ভাষা ও বাঙালিকে লক্ষ্য করেই বিদ্বেষ প্রচার করছেন। এ ধরনের কাজ কতটা অসমিয়া ভাষার হিতাকাঙ্খী মনোভাবের পরিচায়ক সে প্রশ্ন তুলে  রাজ্যের বহু সংখ্যক অসমীয়া বোদ্ধা এবং ব্যক্তিবর্গ যেভাবে পুজোর দিনগুলোতে সংঘটিত ঘটনার নিন্দে করেছেন তাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে একইভাবে ঘটনার নিন্দায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত।

Author

Spread the News