বরাক তরঙ্গ, ২২ ডিসেম্বর : প্রতিবাদের নামে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ি কার্বি ভূমি। কার্বি আংলঙের একাধিক সংগঠন একত্রিত হয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। রবিবার এক প্রতিবাদকারীকে পুলিশ আটক করাকে কেন্দ্র করে সোমবার একাংশ বিক্ষোভকারীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ দিন কার্বি আংলঙের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য তুলিরাম রংহাঙের ডংকামকামস্থিত পূর্বতন বাসভবন, অর্থাৎ পৈতৃক বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করেন প্রতিবাদকারীরা। ওই সময় পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা হিংসাত্মক হয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আকাশে ফাঁকা গুলি চালায়। একই সঙ্গে প্রতিবাদের নামে উপস্থিত উত্তেজিত জনতা তুলিরাম রংহাঙের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা প্রতিবাদের জেরে সোমবার ডংকামকাম এলাকা কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। গত এক বছর ধরে কার্বি আংলঙের একাধিক সংগঠন সরকারের ভূমিনীতি অনুযায়ী কার্বি আংলঙে বসবাসকারী বহিরাগত কার্বিদের বহিষ্কারের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। অভিযোগ, কার্বি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।
অবশেষে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চললেও পরিষদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় না বসায় সংগঠনগুলি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যার ফলস্বরূপ পাহাড়ি কার্বি ভূখণ্ডে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তুলিরাম রংহাঙের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিচালনা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে একাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, অগ্নিসংযোগ করা তুলিরাম রংহাঙের বাসভবনে এই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও সম্পূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানা গেছে।
কার্বি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের সিইএম তুলিরাম রংহাঙের ডংকামকামস্থিত বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর তৎপর হয়েছে পশ্চিম কার্বি আংলং পুলিশ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পশ্চিম কার্বি আংলঙের সমস্ত থানা এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, জেলায় পাঁচজনের বেশি মানুষ এক জায়গায় জমায়েত হতে পারবেন না। কোনও মিছিল বা ধরনা কর্মসূচিও করা যাবে না। সামাজিক মাধ্যমে পুলিশ কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। সামাজিক ও অন্যান্য মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পশ্চিম কার্বি আংলঙের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। গুয়াহাটিতে নবনির্মিত পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় পরিদর্শনকালে তিনি বলেন,
“কার্বি আংলঙে দীর্ঘদিন ধরে একটি দাবি উঠে আসছে যে সেখানে বসবাসকারী যাঁরা স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাঁদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হোক। তবে এই বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায় রয়েছে, যার ফলে বর্তমানে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায় না। একাংশ মানুষ তৎক্ষণাৎ উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আমরণ অনশনেও বসেছিলেন। খেরেনিতে উচ্ছেদের দাবিতে অনশনে বসা কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসার জন্যই তাঁদের গুয়াহাটিতে আনা হয়েছিল। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রী রণোজ পেগু ও রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।”


