বেতুকান্দি ছাড়াও বাকি স্লুইসগেট গুলো দেখার অনুরোধ মার্চ ফর সায়েন্সের
বরাক তরঙ্গ, ৩১ মে : মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চাপ্টারের এক প্রতিনিধি দল শিলচর শহর সংলগ্ন বরাক নদীর বাঁধ ও স্লুইস গেটগুলোর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য আশু পাল, কৃশানু ভট্টাচার্য, হানিফ আহমেদ বড়ভুঁইয়া, ইউনিস আলি চৌধুরী, হিল্লোল ভট্টাচার্যরা বলেন, ২০২২ সালে, জল সম্পদ বিভাগের সার্বিক গাফিলতি ও অসম সরকারের চরম উদাসীনতার ফলে শিলচর শহরের মানুষ যে প্রলয়ঙ্করী বন্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আবারও এবার ঘটার আশঙ্কায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২০২২ সালের জুন মাসের বন্যার পর ১১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর পর চার দিন বরাক নদীতীরের তারাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিপুর নাথপাড়া থেকে সোনাবাড়িঘাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার নদী বাঁধ সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে যে রিপোর্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিক, জেলা প্রশাসন ও অসম সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তাতে এই সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল যে, বন্যার একমাত্র কারণ কাড়ারপারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাঁধের অংশ ছিল না।
এবারের পর্যবেক্ষণেও সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে শুধু কাড়ারপারের স্লুইসগেটে জল সম্পদ বিভাগের আধিকারিকরা বসে থাকলে ভয়াবহ বন্যার হাত থেকে শিলচর শহরকে রক্ষা করা যাবে না। পর্যবেক্ষণ দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে শিলচর শহরে বরাক নদীর জল দুটি স্থান যথাক্রমে কালীবাড়িচর শুঁটকিপট্টি সংলগ্ন ভাঙা স্লুইসগেট ও বেরেঙ্গা খাস এলাকার উমর মসজিদের পাশের অসমাপ্ত স্লুইসগেট দিয়ে প্রবেশ করছে। অথচ উভয় স্থানে জলসম্পদ বিভাগের কোন আধিকারিক ও কর্মচারীকে দেখা যায় নি। কালীবাড়িচর সংলগ্ন স্লুইসগেট দিয়ে বরাক নদীর বিপুল জলরাশি শহরে প্রবেশ করে শহরের জানিগঞ্জ, ভূঁইয়ারগদী, পুরাতন ওয়াটার ওয়ার্কস রোড ইত্যাদি স্থান প্লাবিত করে ধীরে ধীরে বাকি অংশ প্লাবিত করবে। তার চেয়ে মারাত্মক হচ্ছে বেরেঙ্গা খাস এলাকার স্লুইসগেটের উপর যে মাটির বাঁধ রয়েছে তা কিছুদিন আগে প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণের ফাউন্ডেশন তৈরির জন্য জল সম্পদ বিভাগের ঠিকাদার জেসিবি এক্সকাভেটার দিয়ে কেটে সরু করে দিয়েছে। সেখানে বরাক নদীর দিকে অন্ততঃ নয় মিটার জল রয়েছে অন্যদিকে ভেতরের দিকে প্রায় আট মিটার নীচে বরাক নদীর জল প্রবেশ করছে। যদি সেই স্থান জল সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা না হয় তাহলে স্লুইসগেটের উপরের মাটি ধসে গিয়ে বিগত বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও সেখানে প্রসাশনের পক্ষ থেকে ২৪ ঘন্টা পাহারার ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। তা না হলে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানো কঠিন হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে শিলচর তারাপুরের শিববাড়ি রোডের ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় যে গত বন্যার দু’বছরের মধ্যে বরাক নদীর তীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থান নিয়ে যে অবহেলা করা হয়েছে, তা আজ হাজার হাজার মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস ও অনেকের জীবনহানির অন্যতম কারণ হতে পারে। শিববাড়ি রোডের ভাঙা অংশ মেরামতের প্রতিশ্রুতি ও অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা শুনতে শুনতে মানুষের কান পেকে গেছে, অথচ সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চাপ্টারের পক্ষ থেকে শহরবাসীর উদ্দেশ্যে বলা হয় যে মহিষা বিলের জল এখনো শহরের রাঙ্গিরখাল দিয়ে প্রবেশ করছে না বরং বেরেঙ্গার জল ধীর গতিতে মহিষা বিলে প্রবেশ করছে। তাই বেতুকান্দি স্লুইসগেটের নীচে দিয়ে ঢোকা জল নিয়ে অযথা আতংকিত হওয়ার দরকার নেই। তবে জল সম্পদ বিভাগ যদি শুধু কাড়ারপারের স্লুইসগেট নিয়ে পড়ে থেকে অন্য যে সব দিকে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে তা এড়িয়ে যায় তাহলে সমস্যা গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে নিজেদের প্রচারে ব্যস্ত না থেকে জল সম্পদ বিভাগকে আরও বেশি তৎপর হতে চাপ সৃষ্টি করেন, সে ব্যাপারে জনসাধারণকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।