চলতি বছরে গুয়াহাটির আইআইটি-র আরও এক ছাত্রের আত্মহত্যা

বরাক তরঙ্গ, ১০ সেপ্টেম্বর : হোস্টেল-কক্ষে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে গুয়াহাটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হল টেকনোলজি (আইআইটি)-র বিটেক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তারা শেষরাতে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেন এবং সেটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার ছাত্রছাত্রী পর সোমবার দিনভর প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন।

পুলিশের তরফে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছাত্রটির বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। সে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিল। পরীক্ষায় ভালো প্রদর্শন করার পরেও শুধুমাত্র ক্লাসে কম উপস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ তার কয়েকটি বিষয়ে ব্যাক লাগিয়ে দেয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল ছাত্রটি। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানোর পরেও তার কথা শোনা হয়নি। শেষমেষ রবিবার মাঝরাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। তার সহপাঠীরা বলেন, ‘সে কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিল যার ফলে কয়েকটি ক্লাস করতে পারেনি।

তবে পরীক্ষায় তার প্রদর্শন ভালো ছিল। এরপরেও ব্যাক লাগিয়ে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়। সে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেছে, কিন্তু তার কথা শোনা হয়নি। তার মৃত্যুর পর গোটা রাত ঘুমোতে পারিনি আমরা। তার সঙ্গে যা হয়েছে। সেটা অন্যায়। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে পারিনি আমরা।’ গুয়াহাটি আইআইটির তরফে বলা হয়েছে, তারা এই ঘটনায় মর্মাহত এবং মৃত ছাত্রের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে।

চলতি বছরে গুয়াহাটির আইআইটি-র আরও এক ছাত্রের আত্মহত্যা

এ দিকে, কর্তৃপক্ষ সোমবার দুপুরে এক বয়ান জারি করে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা এবং এতে প্রত্যেকেই মর্মাহত। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবা হয় এবং তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ যদি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়, সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তার সমস্যার কথা বলতে পারে। তার সমস্যা শুনতে আমরা প্রস্তুত।’ তবে ছাত্রছাত্রীরা বলেন, কর্তৃপক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যের নামে শুধুমাত্র সেমিনার আয়োজন করে। যখন কোনও ছাত্রছাত্রী বিপদে পড়ে, তার পাশে কেউ দাঁড়ায় না।

চলতি বছরে গুয়াহাটির আইআইটি-র আরও এক ছাত্রের আত্মহত্যা

উল্লেখ্য, আগস্ট মাসে একইভাবে ২৪ বছরের এক ছাত্রী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ছাত্রীটি এমটেক চূড়ান্ত বর্ষে ছিল এবং তার রেজাল্ট খুব ভালো ছিল। তবে বিভিন্ন বিষয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে সে জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একইভাবে এপ্রিল মাসে ২১ বছরের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল। ছাত্রটি বিহারের বাসিন্দা ছিল এবং তার পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেন, সে আত্মহত্যা করেনি। তারা বলেন, ‘সে বারবার আমাদের বলার চেষ্টা করেছে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের সন্দেহ, তাকে এত বেশি র‍্যাগিং করা হয় যে তার মৃত্যু ঘটে এবং সেটাকে আত্মহত্যার রূপ দেওয়া হয়। আমরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছি এবং উচ্চস্তরীয় তদন্ত দাবি করছি।’ যদিও এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং পুলিশ এখনও তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনেনি। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ কুড়ি বছরের এক ছাত্রীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। তখন পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল মেয়েটি অতিরিক্ত মদ্যপান করায় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং যে কামরায় মধ্যপান করছিল সেখানে অনেকেই অন্যান্য নেশায় মগ্ন ছিল। তার ফুসফুসে অত্যধিক বিষাক্ত ধোঁয়া চলে যাওয়ার ফলেই মৃত্যু হয়।

Author

Spread the News