বাঁশকান্দি নেনা মিয়ার তদন্ত শেষে আটক স্কুল সভাপতি শাকিল, বাজেয়াপ্ত ফোন

প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ভুয়ো : শিক্ষামন্ত্রী রণোজ____

কেএইচ লস্কর, লক্ষীপুর।
বরাক তরঙ্গ, ১৬ ফেব্রুয়ারি : কাছাড়ের বাঁশকান্দি নেনা মিয়া এইচএস স্কুলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ভুয়ো বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগু। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন। এটিকে সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর বলেছেন। এ দিকে পুলিশ নিশ্চিত করেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবেদনগুলি মিথ্যা এবং এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া এ ভুয়ো খবর ছড়ানোর দায়ে বাঁশকান্দি পুলিশ ফাঁড়িতে সেন্টার ইনচার্য এক এফআইআর দাখিল করেছেন। তিনি এফআইআরে উল্লেখ করেছেন আরকাটিপুর গ্রামের ইয়াইয়া লস্কর নামে এক ব্যক্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। প্রায় ৯-২০ মিনিটে এবং সরাসরি চলতি পরীক্ষার কক্ষের দিকে চলে যান। তিনি অননুমোদিতভাবে পরীক্ষার কক্ষে উঁকি দিতে থাকেন। পরীক্ষার এওসি (গোপনীয়) তাঁকে তার পরিচয় দিতে অনুরোধ করলেও তিনি অহংকারবশত তা করতে অস্বীকার করেন। এরপর এওসি ফের তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্র ত্যাগ করার অনুরোধ করলেও তিনি পরীক্ষা কেন্দ্র ত্যাগ না করে এওসির সঙ্গে তর্কাতর্কি অব্যাহত রাখেন।

এ অবস্থায় কেন্দ্র বিদ্যালয়ের এসএমডিসি সভাপতি শাকিল আহমেদ বড়ভূইয়া নিজের ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন পরিস্থিতির ছবি তোলেন এবং এসব ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠান। কিছু ছবি এডিট করা হয়েছিল এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেন্দ্রের মানহানি করার জন্য ভুয়ো খবর তৈরি করা হয়েছিল। তিনি এফআইআরে এও উল্লেখ করেন ভুয়ো খবর ভাইরাল হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের দল কেন্দ্রে এসে যথাযথ তদন্ত করে। তদন্তে দেখা যায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে আজকের ঘটনার জন্য শাকিল আহমেদ বারভূইয়া দায়ী এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত ভুয়ো খবর তৈরি করেন।

এ দিকে, সকালে এমন খবর পেয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেন জেলা পুলিশ সুপার নুমুল মাহাতো, ডিডিসি রাজীব রায়, ভারপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক বহ্নিকা চেতিয়া, লক্ষীপুরের সহকারী আয়ুক্ত লক্ষ‍্যজীত গগৈ, শিলচর থেকে আসেন সহকারী আয়ুক্ত (আইএএস) সহ অনেকেই। অভিযোগ উঠেছিল শিক্ষক হায়দর হোসেন মজুমদার নাকি প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। তিনি এই পরীক্ষা পরিচালনার কনফিডেন্টসিয়েল ইনচার্জ। স্কুলের কার্যালয়ে জমা রাখা ছিল তাঁর সেলফোন। প্রথমে শিক্ষক হায়দর হোসেন মজুমদারের সেলফোনটি তদন্ত করে দেখেন উপস্থিত আধিকারিকরা। তাঁর সেলফোনে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি প্রশ্নপত্র ফাঁসের। এরপর তদন্ত করে দেখা হয় এই স্কুলের পরিচালন ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শাকিল আহমদ বড়ভূইয়ার সেলফোন। তার সেলফোন থেকে পাওয়া যায় তিনি শিক্ষক হায়দর হোসেন মজুমদারের নাম টাইপ করে পাঠিয়েছেন সেই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধির কাছে। উপস্থিত পুলিশ সুপার, ডিডিসি, স্কুল পরিদর্শক আনুসঙ্গিক আরও কিছু তদন্ত করে এই পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন তথ্য পাননি। এরপর স্কুল থেকে বেরিয়ে পুলিশ সুপার নোমাল মহাতো, ডিডিসি রাজীব রায় সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার বলেন, এই পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে কোনরকম প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এপর্যন্ত যতটুকু তদন্ত করা হয়েছে এতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অপ্রয়োজনীয় ভাবে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সেলফোন নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করেছেন আপাতত তাঁকেই সন্দেহের আওতায় রেখে তদন্ত অব‍্যাহত রয়েছে।

বাঁশকান্দি নেনা মিয়ার তদন্ত শেষে আটক স্কুল সভাপতি শাকিল, বাজেয়াপ্ত ফোন

ডিডিসি রাজীব রায় স্পষ্ট করে বলেন, বরাক উপত‍্যকার কোন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। ভূয়ো খবর ছড়ানোর জন্য বড়ভূইয়া পদবীর একজনকে সন্দেহ করা হয়েছে। এরপর তাঁরা বেরিয়ে যেতেই বাঁশকান্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শাকিল আহমদ বড়ভূইয়াকে থানায় নিয়ে যান। জেলা পুলিশ একজন শিক্ষক ও সভাপতির সেলফোন বাজেয়াপ্ত করেছেন। পুলিশ সুপার আরও বলেন এই স্কুলে বারবার কেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে এনিয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।

Author

Spread the News