শহিদ কনকলতার জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান সম্পন্ন শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ৩১ ডিসেম্বর : শহিদ কনকলতা জন্ম শতবর্ষ উদযাপন সমিতি, কাছাড় এর পক্ষ থেকে কনকলতার জন্ম শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। সোমবার সমাপ্তি অনুষ্ঠান শিলচরের গান্ধী ভবন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় কনকলতা জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে রচিত ধনজিৎ দত্তের সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ধনজিৎ দত্ত জানান, তিনি ও তাঁর সহযোগীরা এবার এই সঙ্গীত প্রকাশের মাধ্যমে কনকলতাকে শ্রদ্ধা জানান এবং শহিদ কনকলতা জন্ম শতবর্ষ উদযাপন সমিতি, কাছাড় এর পক্ষ থেকে এই সঙ্গীত তাঁদের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পরিবেশনের সুযোগ করে দেওয়ায় সমিতির সদস্যদের তিনি ধন্যবাদ জানান। সান্ধ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের কাছে কনকলতার আত্মবলিদানের ইতিহাস তুলে ধরতে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সমিতির সভাপতি গৌরী দত্ত বিশ্বাসের সভাপতিত্বে পরিচালিত আলোচনা সভার শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সমিতির সম্পাদক দুলালী গাঙ্গুলি।
এরপর বক্তব্য রাখেন সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা নীহাররঞ্জন পাল। তিনি ১৯৪২ সালের ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আসামের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত সংগ্রামের উল্লেখ করে বলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আসামের নাগরিকরা পিছিয়ে ছিলেন না। অবিভক্ত দরং জেলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব ছিল ব্যাপক। গহপুরে ২০ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন কনকলতা বরুয়া ও মুকুন্দ কাকতি। তাঁদের আত্মবলিদানের ইতিহাস ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর হয়ে রয়েছে।
সভার আমন্ত্রিত বক্তা দুধনৈ কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও সারা আসাম কনকলতা জন্ম শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা চন্দ্রলেখা দাস তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন ধারার ইতিহাস বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পরিচালিত আপসহীন ধারার প্রভাব আসামের বিপ্লবীদেরও ব্যপক প্রভাবিত করেছিল। তিনি বলেন, অসমের অন্যতম কবি, সাহিত্যক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্বুদ্ধ করে তৈরি করেছিলেন মৃত্যু বাহিনী গঠন করে জীবন পণ সংগ্রাম করার জন্য। তিনি বলেন, কনকলতা ছোট বেলা থেকেই তিল তিল করে নিজেকে তৈরি করেছিলেন দেশের জন্য সর্বস্ব বলিদান দেওয়ার জন্য। তাঁর আত্মবলিদান নিছক একটি ঘটনা নয় বরং ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। তিনি উপস্থিত ছাত্র যুবকদের বর্তমান যুগপোযোগী আদর্শের ভিত্তিতে কনকলতা সহ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেতনাকে পাথেও করে সংগ্রামে সামিল হতে আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার পর অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীত, আবৃত্তি ও বেলে পরিবেশিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর বাইক ও সাইকেল রেলীতে অংশগ্রহণকারীদের শংসাপত্র প্রদান করা হয়।