মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১২ ডিসেম্বর : যেন কোনও অ্যাকশন ছবির দৃশ্য রাস্তার ধারে শান্তভাবে বাধা থাকা গরুটিকে হঠাৎই ঘিরে ধরল তিন যুবক, জোর করে তুলল গাড়িতে; তারপরই আগেই ধুলো উড়িয়ে দৌড় দিল ওয়াগনার! এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে বাজারিছড়া থানা অধীন পূর্ববাজারির গ্রামে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিনের আলোতে এমন দৃশ্য এর আগে কখনও দেখেননি। প্রকাশ্যে দিনদুপুরে ব্যস্ত রাস্তার মাঝেই ঘটে গেল এই অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য চোখের সামনে বাধা গরু টেনে-হিঁচড়ে তুলে নেওয়া হল একটি দুঃসাহসী চোরচক্রের ওয়াগনার গাড়িতে! মুহূর্তের মধ্যেই ফিল্মি স্টাইলে উধাও হয়ে গেল চোরেরা। বাজারিছড়া অঞ্চলের শান্ত গ্রামীণ পরিবেশে এমন দুঃসাহসিক গরু চুরির ঘটনা ছড়িয়ে দিয়েছে আতঙ্কের ছায়া; স্থানীয়রা বলছেন এ যেন সিনেমার গল্পও হার মানায়! কেনো না দিনের আলোতে, ব্যস্ত পথের ধারে, চোখের সামনে ঘটে গেল চুরির এক রোমহর্ষক দৃশ্য যেন কোনও সিনেমার দৃশ্যপট! বাজারিছড়া এলাকার পূর্ববাজারি গ্রামে রীতিমতো সরগরম দুঃসাহসিক গরু চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
এমর্মে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী তরুণ প্রীতম দেবরায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শুক্রবার দুপুর প্রায় ১২টার সময় তিনি বাইকে করে পূর্ববাজারি রোডের প্রবেশপথ মাকুন্দা মিশন সংলগ্ন পাকা ব্রিজের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি দেখতে পান—ব্রিজের পাশের মাঠে বাধা থাকা একটি গাভিকে টেনে-হিঁচড়ে একটি সাদা রঙের ওয়াগনার গাড়িতে তুলছে তিনজন লোক। হতভম্ব প্রীতম থামিয়ে প্রশ্ন করেন গরুটি কার?” জবাবে গাড়ির লোকজন তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে—“ইতা হিতা নায়!” (এটা এখানে নেই)। কথাটি বলেই চালক দ্রুতগতিতে গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ে চন্দ্রপুর–মাকুন্দা রোডের দিকে। প্রীতম জানান, তিনি দ্রুত ঘটনার কয়েকটি ছবি তুলতে সক্ষম হন। তাঁর তোলা ছবির ভিত্তিতে সন্দেহজনক ওয়াগনার গাড়িটির নম্বর এএস ১১ এফসি ৭৮১৮ Sবলে শনাক্ত হয়েছে। ঘটনার পরপরই তিনি বিষয়টি বাজারিছড়া থানায় জানালে পুলিশও গাড়ির সন্ধানে অভিযান শুরু করে বলে জানান তিনি। চুরি হওয়া গাভিটি স্থানীয় বাসিন্দা রাহুল নন্দীর বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন পূর্ববাজারি থেকে শুরু করে বৃহত্তর বাজারিছড়া এলাকায় প্রায়শই গবাদিপশু চুরির ঘটনা ঘটছে। কৃষক পরিবার থেকে সাধারণ গৃহস্থ—সকলেই অতিষ্ঠ। রাত হলেই এক ধরনের আতঙ্ক গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি কয়েকটি গ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে রাতের পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থাও নিতে হয়েছে। তবুও চোরের দল শনাক্ত বা আটক করতে পারছে না পুলিশএমন অভিযোগ বহুদিনের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অভিযোগ জানালেও বেশিরভাগ সময় তদন্ত এগোয় না। গরু উদ্ধার তো দূরের কথা, চোর চক্রের সদস্যদেরও ধরা যাচ্ছে না। ফলে সুযোগ বুঝে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চোরেরা। বাজারিছড়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় সহ পূর্ববাজারিতে গবাদিপশু চুরির যে ধারাবাহিক অভিযোগ আশেপাশের গ্রামগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল, শুক্রবার দুপুরের ফিল্মি স্টাইলে ঘটে যাওয়া গরু চুরি সেই আশঙ্কাকে আরও পোক্ত করল। প্রত্যক্ষদর্শীর চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটল ঘটনাটি আর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক। এমন অবস্থায়, ঘনঘন গরু চুরির ঘটনা রোধে ও চোর চক্রকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ভুক্তভোগীরা শ্রীভূমি জেলা পুলিশ সুপারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


