পাথারকান্দিতে দিনভর জমজমাট কমিউনিটি ফেস্টিভ্যাল

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ নভেম্বর : বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে শিক্ষা যত গুরুত্বপূর্ণ, তার সমান্তরালে প্রয়োজন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ—এই বিশ্বাসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হল পাথারকান্দি ব্লক প্রাথমিক শিক্ষাখণ্ডের অধীন কাবাড়িবন্দ ক্লাস্টারের এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। ২৪২ নং কাবাড়িবন্দ জেবি স্কুল-এর উদ্যোগে দিনভর চলা এই কমিউনিটি ফেস্টিভ্যাল শুধু এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়; বরং এটি হয়ে ওঠে শিশুদের মনন, সৃজনশীলতা ও সামগ্রিক বিকাশের এক অনন্য মঞ্চ।দিনের শুরুতে স্কুল প্রাঙ্গণেই সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। সদ্য প্রয়াত অসমের কিংবদন্তি শিল্পী জুবিন গর্গের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি ও নীরব শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের চোখে ভেসে ওঠে শিল্পীর প্রেরণাদায়ী জীবন ও শিল্পযাত্রার স্মৃতিএরপর উৎসবের মূল আকর্ষণ, প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথি ও বিচারকমণ্ডলীর সামনে। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুল থেকে অংশগ্রহণকারী ক্ষুদে শিল্পীরা একে একে মঞ্চে উঠে নাচ, গান, আবৃত্তি ও পরিবেশনায় নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরে। শিশুদের সরল হাসি, মঞ্চে আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপ এবং উৎসুক অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস মিলেমিশে জেবি স্কুলের প্রাঙ্গণটি পরিণত হয় প্রাণবন্ত উৎসব-আঙ্গিনায়।প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গ-এর প্রাক্তন সভাপতি ও শিক্ষাবিদ এএস হোসেন আহমদ,চতুরঙ্গের বর্তমান সভাপতি সুরজিৎ হোমচৌধুরী, খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক কর্মী পুলক সোম। তাদের অভিজ্ঞ রায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে নির্বাচিত হয় সেরা প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা।

নৃত্য প্রতিযোগিতায়প্রথম: রেহানা বেগম (সাউথ টিলাবাড়ি এলপি (স্কুল) দ্বিতীয়: সানিয়া পারভীন (সাউথ টিলাবাড়ি এলপি স্কুল) তৃতীয়: আর্শী সুলতানা (কৃষ্ণচরণ এলপি স্কুল) আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম: নুসরাত সুলতানা (কৃষ্ণচরণ এলপি স্কুল) দ্বিতীয়: আর্নশী হক (জনকল্যাণ এলপি স্কুল) তৃতীয়: তাহামিনা ইয়াসমিন (কাবাড়িবন্দ জেবি স্কুল)।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে কাবাড়িবন্দ জেবি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা অমিতা রায় বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিটি শিশুর মধ্যে থাকা লুকায়িত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রতিযোগিতা নয়, অংশগ্রহণই তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়—আর এই উৎসবের মূল লক্ষ্য সেই আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা অসম সরকারের এই উদ্যোগকে আন্তরিক সাধুবাদ জানান। তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন পড়াশুনার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি—এই সবকিছুই শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সুশিক্ষিত, সুনাগরিক হওয়ার পথে শিক্ষকই হচ্ছে প্রথম পথপ্রদর্শক; প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয় ভালো শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ছাড়া। এরপর উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের হাত দিয়ে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শিশুদের মুখে ফুটে ওঠা উচ্ছ্বাস ও আনন্দে অনুষ্ঠানস্থল আলোয় ঝলমল করে ওঠে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিইইও বিশ্বজিৎ দে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মুজাক্কির আলি, শিক্ষক সংস্থার ব্লক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সিআরসি বিশ্বপ্রিয় দাস, শিক্ষিকা হাসিনা পারভিন, অভিজিৎ দে প্রমুখ। তাদের উপস্থিতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আরও উৎসাহ যোগায়। দিনভর আনন্দ-উৎসব শেষে জাতীয় সংগীতের মহিমায় অনুষ্ঠানটি সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধান শিক্ষিকা অমিতা রায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *