জেলা ক্রীড়া সংস্থায় স্থায়ী ভাষা শহিদ স্মৃতিসৌধের উন্মোচন
ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ মে : ৬৪ তম একাদশ ভাষা শহিদ দিবসে জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রাঙ্গণে উন্মোচিত হলো স্থায়ী শহিদ স্মৃতি সৌধ। সোমবার এর আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করেন শিক্ষাবিদ ও লোক গবেষক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও যুগশঙ্খ পত্রিকা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বিজয় কৃষ্ণ নাথ সহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার পদাধিকারীরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, ক্রীড়ার সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি শহিদদের স্মৃতিতে নবনির্মিত ভাষা স্মৃতি সৌধটি আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি বাংলা ভাষা সহ বিভিন্ন ভাষার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এও বলেন, এবারে অসম সাহিত্য সভার কর্মকর্তারা বরাকের শিলচর সফরে এসে শিলচরের ঐতিহাসিক এই দিনটির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাদের এহেন ভাব প্রকাশের ফলে অসম সরকার এবারে এখানকার গণদাবি শিলচরের রেলস্টেশনকে ভাষা শহিদের নামে নামাঙ্কিত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। বক্তব্যের পরিসরে বিধায়ক এও বলেন, রেলস্টেশনের ভাষা শহিদ মঞ্চে ৬১র আত্ম বলিদানকারীদের সরকারিভাবে শহিদ স্বীকৃতিকে সমর্থন জানিয়েছেন অসম সাহিত্য সভার পদাধিকারীরা।
বিধায়কের আগে এদিনের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভাপতি শিবব্রত দত্ত। ৬১র ভাষা শহিদদের আত্ম বলিদানের উপর বিস্তারিত তথ্য সবার সম্মুখে তুলে ধরেন শিক্ষাবিদ ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। মঞ্চে উপস্থিত যুগশঙ্খ পত্রিকা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বিজয় কৃষ্ণ নাথ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি বাবুল হোড় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন এবং উভয়েই সংস্থার বর্তমান পরিচালন সমিতির এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ অতনু ভট্টাচার্য বলেন, টিচার্স এন্ড এমপ্লোয়িজ ফোরামের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার গভর্নিং বডি ভাষা শহিদ স্মৃতি সৌধটি তৈরিতে অনুপ্রাণিত হয়। এজন্য তিনি টিচার্স এন্ড এমপ্লোয়িজ ফোরামকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বাস্তকার প্রবাল দেবের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। স্মৃতিসৌধ তৈরিতে বিধায়ক সহ যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের প্রতিও ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অতনুবাবু।
এইদিনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একাদশ ভাষা শহিদ স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সরলা বিড়লা জ্ঞানজ্যোতি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ‘রক্ত দিয়ে লেখা ভাষা’ শীর্ষক একটি পথ নাটিকা পরিবেশন করে। পর্যায়ক্রমে নৃত্য পরিবেশন করেন সুস্মিতা নাথ চৌধুরী ও সঙ্গীতা দাস। আবৃত্তি করেন শান্তশ্রী সোম, অর্পিতা নাথ ও শিশু শিল্পী বিদিশা কর। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী, রথীন্দ্র চক্রবর্তী ও কল্যাণী দাম। সবশেষে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন প্যারামাউন্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। অনুষ্ঠানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সকল সদস্য সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্কুল কলেজের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্লাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শেষে সংস্থার সদস্যরা সম্মিলিতভাবে পদযাত্রা করে গান্ধীবাগের একাদশ শহিদ স্মৃতি ভবনে গিয়ে শহীদদের প্রতি পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অতনু ভট্টাচাৰ্য। তাঁকে সহযোগিতা করেন সাংস্কৃতিক বিভাগের সচিব প্রণব কল্যাণ দে।
