জেলার শ্রীভূমি নামকরণ বিতর্ক অহেতুক

জেলার শ্রীভূমি নামকরণ বিতর্ক অহেতুক

।। প্রদীপ দত্ত রায় ।।
(ছাত্র সংগঠন আকসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী)
২২ নভেম্বর : রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে করিমগঞ্জ জেলার নাম বদলে শ্রীভূমি জেলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন শুধু জায়গার নাম পরিবর্তন হলেই উন্নয়ন হবে নাকি। কেউ কেউ বলছেন করিমগঞ্জ জেলার সমস্যা কে ঢেকে রাখতে সাধারণ মানুষের আবেগকে উসকে দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে  অনেকেই আলোচনা সমালোচনা করছেন। অতীতের ঐতিহ্য স্মরণ করে যদি জেলার নাম বদল করা হয়ে থাকে তাহলে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো কোন অন্যায় নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণ করার প্রস্তাবটি দীর্ঘদিনের। বরাকের সকল জনগোষ্ঠীর আবেগ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এ নিয়ে মানুষের মনে সংশয় দানা বেঁধে রয়েছে। আমি মনে করি, রাজ্য সরকার একটি জেলার যদি নাম বদল করতে পারে তাহলে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনের নাম বদলে সিদ্ধান্ত নিতে এগিয়ে আসা উচিত। মানুষের ভাবাদেরকে সম্মান জানাতে এটা অবিলম্বে করা উচিত বলে আমি মনে করি। জেলার নাম বদল নিয়ে যারা হইচই করছেন তারা ভালোভাবেই জানেন মাদ্রাজ শহরের নাম বদলে চেন্নাই হয়েছে, ক্যালকাটা নাম বললে কলকাতা হয়েছে, বোম্বাই নাম বদলে মুম্বাই হয়েছে, এলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ হয়েছে, লুসাই পাহাড় জেলার নাম বদলে মিজোরাম হয়েছে, নেফা প্রদেশের নাম বদলে অরুণাচল প্রদেশ হয়েছে। এধরনের হাজারো উদাহরণ সামনে আনা যেতে পারে। এ নিয়ে সমালোচনা করা অযথা শক্তি ক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। যাঁরা নাম বদলের সমালোচনায় মত্ত হয়েছেন তাদের উচিত করিমগঞ্জ জেলার যেসব সমস্যা এখনো রয়েছে যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ,যাতায়াত সেগুলি জনসমক্ষে ভালোভাবে তুলে ধরা। জনপ্রতিনিধিদের সেইসব সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ পেতে বাধ্য করা। যাতে এই সমস্যাগুলি সমাধানে সরকার এগিয়ে আসতে পারে। কেবলমাত্র জেলার নাম বদলের এই ছোট্ট বিষয়টি রাজনীতির হাতিয়ার করলে তা ভোট মেরুকরণের পথকেই প্রশস্ত করে তুলবে। রাজনীতিক ব্যক্তিদের এ বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। বিরোধীদল কংগ্রেস প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে এই নাম বদলের বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে প্রস্তুত তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।

শ্রীহট্ট অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিদের বাসস্থান ছিল। আমাদের সামাজিক জীবনে যে খনার বচন প্রচলিত রয়েছে সেই খনা শ্রীহট্ট অঞ্চলেরই বলে দাবি করা হয়ে থাকে। মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থে বর্ণিত চাঁদ সওদাগর ব্যক্তিটিও শ্রীহট্ট অঞ্চলেরই বনিক বলে মনে করা হয়। কারণ এর কিছু যুক্তি ও রয়েছে। অনেক শাস্ত্রীয় পণ্ডিত ব্যক্তির বাসস্থান ছিল শ্রীহট্ট। তাদের সিদ্ধান্ত বাংলার বিভিন্ন অংশে সমাদৃত ছিল। ব্রিটিশ আমলে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে পৃথক করে যখন অসম রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন এই অঞ্চলে রাজস্ব ঘাটটির দিকে নজর রেখে ব্রিটিশরা শ্রীহট্ট এবং গোয়ালপাড়া জেলাকে অসমের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই দুটি অঞ্চলেই ছিল বাংলার অংশ। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে তৎকালে গঠিত অসাম রাজ্যের শাসক ছিলেন চিফ কমিশনার। তার কার্যালয়ে ছিল শিলং। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শ্রীহট্ট বা সিলেট জেলা অধিকাংশ পাকিস্তানি চলে গেল গেলেও ওটা গোয়ালপাড়া জেলা কিন্তু অসমেই রয়ে গেছে। শিহট্ট জেলা রাজস্ব সমৃদ্ধ ছিল। কুটির শিল্প ছিল সমৃদ্ধ অঞ্চল। ফলে এই অঞ্চলটিকে অসমের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্রিটিশরা তাদের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করেছিল।

শ্রীহট্ট অঞ্চল এককালে বাংলার বরেন্দ্র রাজ্যের অংশ ছিল। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটি কামরূপের পাল রাজাদের অধীনে যায়। নরনারায়ন কোচ রাজ্য স্থাপনের পর রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেটের বৃহৎ অংশ কোচ রাজ্যের অধীনে হয়। ওই সময় কোচ রাজ্যের সীমা কাছাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শ্রীহট্ট জেলা একটা সময় ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন ছিল। ডিমাসা রাজারা কাছাড়ে রাজত্ব স্থাপন করার পর শ্রীহট্টের কিছুটা অংশে তাদের রাজ্যসীমা বিস্তৃত করে ওই সময়ে ত্রিপুরা রাজাদের সঙ্গে ডিমাসা রাজাদের যুদ্ধ হয়েছিল। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করছি, করিমগঞ্জ সহ সিলেট অঞ্চলের মধ্যযুগের ইতিহাসের আকর গ্রন্থ হিসেবে দররোজার বংশাবলী একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। গ্রন্থটি সূর্যকরী দৈবজ্ঞ’ নামক বিখ্যাত অসমিয়া সাহিত্যিক কর্তৃক প্রণীত এবং রাজা পরিক্ষিৎ পর্যন্ত (সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পর্ব) কোঁচ রাজবংশের একটি পদ্য উপাখ্যান। সাঁচী পাতায় লিখিত এই পাণ্ডুলিপিটির মধ্যে কেঁচ রাজবংশের ইতিহাসের সঙ্গে কাছাড়, ত্রিপুরা সহপরবর্তীকালের করিমগঞ্জ মহকুমাধীন অঞ্চলে চিলা রায়ের অভিযানের কথা লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু পাণ্ডুলিপির লেখক তাঁর পরিবেশিত তথ্যাবলির উৎসের বিবরণ দেননি। তবুও এটাকে কামান্য নথি হিসেবে গণ্য করা যায়। করিমগঞ্জ সহ সিলেটের মধ্য যুগের লিখিত উপাদানগুলির মধ্যে ইতিহাস মূলক গ্রন্থাবলী যাড়াও সে যুগে সম্পাদিত দলিল দস্তাবেজ, রাজ আজ্ঞাপত্র এবং এ অঞ্চলে প্রণীত ধর্মকেন্দ্রিক কিছু গ্রন্থও আছে। এ প্রসঙ্গে পরবর্তীকালের করিমগঞ্জ মহকুমাধীন অঞ্চলের পঞ্চখণ্ডে ১৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত একটি ভূমি বিক্রির কবালা ভাষাও অর্থনৈতিক ইতিহাসের উপাদান রূপে গণ্য হতে পারে। ১১৭২ বঙ্গাব্দে (১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ) ডৌয়াদি নিবাসী নন্দরামকে প্রদত্ত একটি রাজানুজা পত্র” ইতিহাস উপাদানের নিদর্শন। মধ্যযুগের বঙ্গ ও তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহে শ্রীচৈতন্য (১৪৮৫-১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ) এক বিরাট ধর্মান্দোলন প্রবর্তন করেছিলেন। এই আন্দোলনকে ভাববিপ্লব অভিধায় ভূষিত করাই সমীচীন। শ্রীচৈতন্যের এই আন্দোলন বৈষ্ণব আন্দোলন নামে খ্যাত ।

শাসক মহলের মতে, “জেলাটির  নাম করিমগঞ্জ থেকে শ্রীভূমি করার পেছনে রয়েছে ইতিহাস পুনরুত্থানের কথা। এই নাম বদল করে পূর্বেকার ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দিল বর্তমান সরকার।” আসলে শ্রীহট্ট জেলাকে মহকুমায় বিভক্ত করার ইংরেজদের তাৎক্ষণিক একটা সিদ্ধান্তের ফলে মহকুমাটির নাম হয়েছিল করিমগঞ্জ। ১৮৭৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শ্রীহট্ট ও কাছাড় আসাম প্রদেশের সুরমা উপত্যকা নামে পরিচিত ছিল। ইংরেজ আমলেই শাসনের সুবিধার্থে শ্রীহট্ট জেলাকে কয়েকটি মহকুমায় ভাগ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। ১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ, ১৮৭৮ সালে করিমগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এবং ১৮৮২ সালে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা মৌলবিবাজার মহকুমা গঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ‘শ্রীহট্ট কাছাড়ের ভাষা সাহিত্য ও সমাজ’  – বইতে অধ্যাপক জন্মজিৎ রায় লিখেছেন, ” সেকালের সুরমা উপত্যকার অন্তর্গত করিমগঞ্জ মহকুমা ছিল একটি বর্ধিষ্ণু মহাকুমা। ১৮৭৮ সালে মহকুমারূপে চিহ্নিত করার আগে করিমগঞ্জ নামটি কিন্তু প্রচলিত ছিল না। ” শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি লিখেছেন,  ‘নটীখালের পূর্বতীরে, নটীখাল – কুশিয়ারা সঙ্গমস্থল হইতে প্রায়  এক কিলোমিটার দক্ষিণে তখন একটি বাজার মাত্র ছিল। এই বাজার বা গঞ্জ স্থানীয় মিরাশদার মোহাম্মদ করিম চৌধুরী কর্তৃক স্থাপিত হয় বলে করিমগঞ্জ নামকরণ  হয়। হেমন্ত ঋতুতে নটীখালে জল থাকে না বলে অসুবিধা দেখা দেয়। তাই এই বাজার ১২৭২ বঙ্গাব্দে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।’অর্থাৎ বাজার স্থানান্তরকরণের সময় কুশিয়ারা- নটীখালের সঙ্গমস্থল বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেটাই বর্তমানে পৌরসভার অনুমোদিত সন্তর বাজার। অচ্যুতচরণের মতে এই বাজার স্থানান্তরকরণের ঘটনা ঘটে ১২৭২ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৬৫ -৬৬ সালে। এই ঘটনার ১২ বছর পর মহকুমার নামকরণের সময় ইংরেজ সরকার করিমগঞ্জ নামটি বেছে নেয়। করিম চৌধুরীর বাজার স্থাপিত হওয়ার পূর্বে এই অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমাংশ পঞ্চখন্ড এবং দক্ষিণাংশ প্রতাপগড় নামে পরিচিত ছিল। পঞ্চখন্ড ছিল মিথিলা থেকে আগত পঞ্চব্রাহ্মণের আদি বাসভূমি। ভাটেরা তাম্রশাসনেও এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। ব্রিটিশ শাসনের অনেক আগেই শ্রীহট্ট অঞ্চলে উত্তরপ্রদেশের কনৌজ থেকে প্রচুর ব্রাহ্মণ পরিবার সেখানে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন সময়ের সংস্কৃত পন্ডিতদের আগমনে শ্রীহট্টে এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় হওয়া দেশ বিভাজনে শ্রীহট্ট বা সিলেট জেলা পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) হস্তান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালে বিভাগের সময় বিতর্কিত গণভোটে করিমগঞ্জ সিলেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সময়ের অবিভক্ত করিমগঞ্জ মহকুমা থেকে সাড়ে তিনটি থানার অঞ্চল নিয়ে গঠিত সংকুচিত করিমগঞ্জ মহকুমা ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার এক মহকুমা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সাড়ে তিন খানা হল- রাতাবাড়ী থানা, পাথরকান্দি থানা ও করিমগঞ্জ থানার অর্ধেক অঞ্চল। করিমগঞ্জ  ১৭৭৮ সালে ৪০টি পরগনা নিয়ে অবিভক্ত সিলেট জেলার একটি মহকুমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় শ্রীহট্ট জেলা বা সিলেটকে নিয়ে গণভোটের আয়োজন করা হয়। ভারত না পাকিস্তান, সিলেট কার সঙ্গে যাবে—এ প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটে সিলেটের জনগণ রায় দেন, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যাবেন। এই গণভোট যে প্রহসন ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।কারণ  , ওই সময় চা বাগান অঞ্চলের মানুষকে ভোটে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। চা বাগান অঞ্চলের মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতে তাহলে সিলেট ভারতের অংশ হয়েই থাকতো। গণভোটের ফলে সিলেট ফিরে যায় পূর্ব বাংলায়। তবে সম্পূর্ণ না। ব্রিটিশরা যখন সিদ্ধান্ত নেয় ভারত-পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্র বানিয়ে তারা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাবে, তখন দুটি রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের জন্য স্যার সিরিল  র্্যড ক্লিফের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করা হয়। তারা চিহ্নিত করে সীমানা। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ ছাড়াও তখন সিলেটের আরেকটি মহকুমা ছিল যার নাম করিমগঞ্জ। র‌্যাডক্লিফের সিদ্ধান্তের ফলে করিমগঞ্জসহ সাড়ে তিনটি থানা থেকে যায় ভারতে। করিমগঞ্জ মহাকুমার সাড়ে তিনখানা এলাকা ভারতের সঙ্গে আসে ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট। কারণ এই সাড়ে তিন থানায় এলাকাও পাকিস্তানে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে বর্তমান করিমগঞ্জ জেলার নানাস্থানে মিছিল বের হয়েছিল। গোটা শ্রীহট্ট জেলাকে পাকিস্তানের ঠেলে দিলে ত্রিপুরা রাজ্য পাকিস্তানের সীমার মধ্যে স্থলবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন দীপ হয়ে দাঁড়ায়। ত্রিপুরার রাজকুমারী বিভু দেবী তখন রেডক্লিফের দ্বারস্থ হয়ে বলেন, যাতায়াতের সহজ উপায় না থাকলে করদ রাজ্য ত্রিপুরা তাহলে কিভাবে ভারতের সঙ্গে সামিল হবে। তখন রেডক্লিফ মানচিত্র দেখে করিমগঞ্জ জেলার সাড়ে তিন থানা অঞ্চলকে কেটে ভারত ভুক্তির নির্দেশ দেন। ১৭ আগস্ট করিমগঞ্জের সাড়ে তিন থানা স্বাধীনতার মর্যাদা নিয়ে কাছাড় জেলার অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই দিনে বর্তমান করিমগঞ্জ জেলার মানুষ স্বাধীনতা উদযাপন করেছিলেন। ১৫ আগস্ট সারা ভারত স্বাধীনতা উদযাপন করলেও করিমগঞ্জ যেহেতু পাকিস্তানের অংশ হয়ে গিয়েছিল তখন সেখানে মুসলিম লীগের শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। সেখানে বসবাসকারী হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। দুদিন বিলম্বে ভারত ভুক্তিতে ফের করিমগঞ্জের মানুষের মনে আতঙ্ক দূর হয়।  ১৯৮৩ সালের ১লা জুলাই থেকে আসাম সরকার করিমগঞ্জ মহকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলার স্বীকৃতি দেয়।

১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন অসমের শ্রীহট্ট জেলায় অবতরণ করেন। সে সময়  তিনি  শ্রীহট্ট জেলাকে শ্রীভুমি আখ্যায়িত করে কয়েকটি লাইন লিখেছিলেন।’ মমতাবিহীন কালস্রোতে বাংলার রাষ্ট্রসীমা হতে নির্বাসিতা তুমি সুন্দরী শ্রীভূমি। ‘ শ্রীহট্টের সৌন্দর্য কবিকে আকৃষ্ট করেছিল। তাছাড়া সম্ভ্রান্ত জনবসতীর এই অঞ্চলের স্থানান্তরের বেদনাকে তিনি অনুভব করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীহট্টকে শ্রীভূমি বলে আখ্যায়িত করার পর বিভিন্ন সংগঠন শ্রীভূমি নাম কে গ্রহণ করে এসেছে। শ্রীহট্ট জেলা বিভাজিত হয়ে যাওয়ার পর ভারতে সংযুক্ত করিমগঞ্জ জেলার অংশে শ্রীভূমি নামটি চর্চিত হতে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে শ্রীভূমি নাম ব্যবহার করা হয়। পরিশেষে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার রাজ্য সরকার করিমগঞ্জ শহরের নাম বদল করেনি। শুধুমাত্র জেলার নাম বদল করেছে। ব্রিটিশ আমলে একটি গঞ্জের নামকে মহকুমার নাম করা হয়েছিল। যদিও তখন অঞ্চলটির পূর্বতন নাম পঞ্চখন্ডকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। এখন যদি রবীন্দ্রনাথের শ্রীভূমি নামকে, মর্যাদা দিয়ে করিমগঞ্জ জেলার নাম শ্রীভূমি জেলা করা হয়ে থাকে, তা এমন কিছু দূষনীয় ব্যাপার নয়। এখন জেলার নাম বদল হলেই সাংঘাতিক কিছু সমস্যার সৃষ্টি হবে তেমন ভাবার কারণ নেই। অসমে একাধিক জেলা গঠিত হয়েছে যেগুলি আগে ছিল না। সেসব অঞ্চলে তেমন কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। এই নাম বদল নিয়ে রাজনীতি করে ছেড়ে কোন লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।

Author

Spread the News