ছটপূজা ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ হাইলাকান্দি জেলার চা-বাগান এলাকায়
বরাক তরঙ্গ, ৭ নভেম্বর : ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রকৃতি পূজাকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পূজা অর্চনার সাথে প্রকৃতির যোগসাজশ কোন না কোন ভাবে জড়িত আছে। আর এক্ষেত্রে আমরা ছট পূজা কে ও ধরতে পারি। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ছট হল একটি প্রাচীন হিন্দু উৎসব এবং শুধুমাত্র হিন্দু সূর্য দেবতা, সূর্য এবং ছঠি মাইয়া (প্রাচীন বৈদিক দেবী ঊষা) কে উৎসর্গ করা বৈদিক উৎসব। পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য সূর্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য ছট পূজার আয়োজন করা হয়।
গোটা দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে হাইলাকান্দি জেলার প্রতিটি চা বাগান এলাকায় ছট পূজাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অস্তগামী ভগবান ভাস্করকে অর্ঘ্য সমর্পিত করলেন ছট ব্রতিরা। এদিন দুপুর দুইটা থেকেই বিভিন্ন নদী, উপনদীর তীরবর্তী এলাকায় ঢল নামে ছট ব্রত পালনকারীদের। সবাই নুতন বস্ত্র পরিধারন করে ডালায় বিভিন্ন পুজা সামগ্রী ফল নৈবেদ্য নিয়ে সবান্ধব উপস্থিত হন নদীর তীরে। বৈদিক প্রথা অনুযায়ী ভগবান ভাস্করকে পূজা আরাধনা সেরে নদূর জলে দাঁডিয়ে আস্তাচলগামী সূর্য দেবতাী আরাধনায় মেতে ওঠেন আবাল বৃদ্ধ বনিতা। ঠিক সুর্যাস্তের প্রাক মুহুর্তে আস্তাচলগামী ভগবান ভাস্করকে ষষ্টী তিথিতে দুধের অর্ঘ্য সমর্পিত করে প্রথম দিনের পূজার সমাপ্তি ঘটে। শুক্রবার সকালে শুক্লা সপ্তমী তিথিতে একই ভাবে উদীয়মান সর্যদেবতাকে অর্ঘ্য সমর্পিত করে চার দিবসীয় ছট মহাপর্বের সমাপ্তি ঘটবে।
অন্যদিকে, ছট পূজা উপলক্ষ্য সকাল থেকেই সর্বত্র ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। পূজা উপভোগ করতে রীতিমত জনসমুদ্র নামে বিভিন্ন জলাশয়ের পাশে। হাইলাকান্দি জেলার চা জনগোষ্ঠী এলাকাগুলীতে ছট পূজা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে আয়োজিত হয়। ছটপূজা কে কেন্দ্র করে হাইলাকান্দির লালামুখ, কুনকুনবস্তি, গাগলাছড়া, নরসিংহপুর, লালাছড়া, বার্নারপুর, রুপাছড়া, ধলাই, মণিপুর, সুলতানি, ঘারমুড়া, কাটলিছড়া, আয়নাখাল, সিঙ্গালা, কৈয়া, লক্ষীনগর, সরসপুর, বার্নীব্রিজ প্রভৃতি বাগান বস্তি এলাকায় প্রবল উৎসাহ উদ্দিপনায় পালিত হচ্ছে এই ছট মহাপর্ব।
প্রতিটি চা-বাগান, ফাঁড়ি বাগান ও বস্তি এলাকায় ছিল উৎসবের মেজাজে। গোটা আয়োজনকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে ছটপূজা কমিটি গুলো। ছট পুজো উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাধেশ্যাম কৈরি, যুবনেতা প্রেমরাজ গোয়ালা, কিশোর যাদব, রামব্রত নুনিয়া, জটা শঙ্কর পাণ্ডে, সুমন্ত পাণ্ডে, প্রাক্তন ডিআই জওহরলাল রায়, লালামুখ জিপির প্রাক্তন সভাপতি বিস্বপ্রিয় সেন, প্রাক্তন এপি সদস্য সঞ্জিব নারায়ন দুসাদ প্রমুখ। লালামুখ বাগানে ছটপুজা ঘাটে পুন্যার্থীদের ব্যবস্থাপনায় সাক্রিয় ভুমিকায় ছিল লালামুখ বাগান পঞ্চায়েত। সভাপতি প্রেম লাল রী, সিণ্টু রী, গোপাল ঘোষ, মুকেশ ঘোষ, রানু কর্মকার প্রমুখ ঘাটে সক্রিয় ছিলেন। কৈয়া বাগানে ছট ঘাটে কে সাজিয়ে তুলেছিল ছট পুজো কমিটি। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ছটপুজা কমিটির সভাপতি অজয় নুনিয়া, কৈয়া বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি রাজকুমার কৈরি, সুখদেব বীন, বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র অর্গেনাইজার রবীন্দ্র শীল, সত্যনারায়ণ নুনিয়া, সন্তোষ পাণ্ডে সহ স্থানীয় আয়োজকমণ্ডলী।