এআইডিএসও-র পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত, সভাপতি পদে বহাল স্বাগতা, নয়া সম্পাদক স্বপন

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ শিক্ষার প্রাণসত্বা ধ্বংসের ছক : রাজ্য সভাপতি প্রজ্জোল দেব

বরাক তরঙ্গ, ১ অক্টোবর : দু’টি অধিবেশনের মাধ্য়মে পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও-র। মঙ্গলবার শিলচরের গান্ধীভবণ প্রেক্ষাগৃহে প্রকাশ্য সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয় অধিবেশন। স্বাগতা ভট্টাচার্য ও প্রশান্ত ভট্টাচার্যকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ভাষা শহিদ নামাঙ্কিত মঞ্চে প্রকাশ্য সমাবেশের উদ্বোধন করেন শ্যামদেও কুর্মী। প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন গৌরচন্দ্র দাস। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এআইডিএসও’র রাজ্য সম্পাদক হেমন্ত পেগু, রাজ্য সভাপতি প্রজ্জ্বোল দেব। হেমন্ত পেগু তার বক্তব্যে বলেন, গরীব তথা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য যে সর্বগ্ৰাসী আক্রমণ চলছে তার বিরুদ্ধে জাত পাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু অসমের সাম্প্রদায়িক ও উগ্ৰপ্রাদেশিকতা শক্তি জাতি বিদ্বেষী প্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভক্ত করার চক্রান্ত চালোনোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর জঘন্য আক্রমণ নামিয়ে আনছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত প্ররোচনা থেকে মুক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের ঐক্যকে চোখের মণির মতো রক্ষা করার আহ্বান জানান।

রাজ্য সভাপতি প্রজ্জ্বোল দেব বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষার প্রাণসত্বা ধ্বংসের ছক তৈরি করেছে। তিনি বলেন শিক্ষার বেসরকারিকরণ, ব্যক্তিগতকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটিয়ে শিক্ষাকে একদিকে সাধারণ পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে অন্যদিকে শিক্ষার মাধ্যমে চরিত্র গঠন ও মনুষ্যত্ব অর্জনের যে সুযোগ ছিল তা চিরতরে শেষ করে দিতে চলছে। তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি চালুর মধ্য দিয়ে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে কেন্দ্র সরকার গণ্য করতে শুরু করেছে। বর্তমান কেন্দ্র সরকার সেই শিক্ষানীতির পথ ধরেই জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ চালু করে দেশ ও বিদেশের পুঁজিপতিদের হাতে ব্যবসায়ীক স্বার্থে শিক্ষাব্যবস্থাকে তুলে দিয়েছে। ফলে প্রতিটি রাজ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আসামেও একই অবস্থা চলছে। তিনি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে উন্নত নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আগামী ২৭ -২৯ নভেম্বর নতুন দিল্লিতে যে সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলনকে সফল করার জন্য ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান।

এআইডিএসও-র পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত, সভাপতি পদে বহাল স্বাগতা, নয়া সম্পাদক স্বপন
বক্তব্য রাখছেন রাজ্য সভাপতি।

প্রকাশ্য সমাবেশের পর নজরুল-কনকলতা নামাঙ্কিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সম্মেলনে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ও মূল প্রস্তাব পেশ করা হয়। উভয় প্রস্তাবের উপর বিস্তর আলোচনা করে সেগুলো সংশোধনী সহ গৃহীত হয়। এতে প্রতিটি আঞ্চলিক কমিটির সদস্যরা অংশ গ্রহণ করে। প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখেন এআইডিএসও’র রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য। মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের অসম রাজ্য কমিটির সদস্য ও কাছাড় জেলা সম্পাদক ভবতোষ চক্রবর্তী।

এআইডিএসও-র পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত, সভাপতি পদে বহাল স্বাগতা, নয়া সম্পাদক স্বপন
সম্পাদক হেমন্ত পেগু বক্তব্য রাখছেন।

তিনি বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতা পর প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী দার্শনিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন ধারার অন্যতম বিপ্লবী শিবদাস ঘোষ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে দেশ রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীন হলেও প্রকৃত গণমুক্তি অর্জিত হয়নি। দেশের অগনিত মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তার সুফল জনগণের জীবনে আসবে না। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে শিক্ষার অধিকারও সাধারণ মানুষের হাতে থাকবে না। তাঁর এই বিশ্লেষণকে পাথেও করে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয়েছিল ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও। আজ এই সংগঠন দেশের একমাত্র বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।

এআইডিএসও-র পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত, সভাপতি পদে বহাল স্বাগতা, নয়া সম্পাদক স্বপন

প্রতিনিধি সম্মেলন থেকে স্বাগতা ভট্টাচার্যকে সভাপতি ও স্বপন চৌধুরীকে সম্পাদক মনোনীত করে ৩১ সদস্যের কাউন্সিল ও ১৬ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত জেলা কমিটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতা রক্ষায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার গ্রহণ করে। সভাপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে সভার কাজ সমাপ্ত হয়।

এআইডিএসও-র পঞ্চম কাছাড় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত, সভাপতি পদে বহাল স্বাগতা, নয়া সম্পাদক স্বপন

এ দিন সম্মেলন উপলক্ষে দুপুর বারোটায় ভারতের নবজাগরণ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মনীষীদের প্রতিকৃতি এবং শিক্ষার বেসরকারিকরণ, ব্যক্তিগতকরণ, সাম্প্রদায়িকরণ প্রতিরোধ সহ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে একটি সুসজ্জিত মিছিল সেন্ট্রাল রোড, নাহাটা পয়েন্ট, জানিগঞ্জ, কোর্ট কমপ্লেক্স, দেবদূত পয়েন্ট হয়ে পুনরায় গান্ধীভবনে পৌঁছায়। সেখানে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন এআইডিএসও’র রাজ্য সভাপতি প্রজ্জ্বোল দেব। এরপর ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে নির্মিত শহিদ বেদীতে মাল্যদান করেন এআইডিএসও’র অসম রাজ্য কমিটির সম্পাদক হেমন্ত পেগু, প্রাক্তন শিক্ষক ও গণ আন্দোলনের নেতা শ্যামদেও কুর্মী, এআইডিএসও’র অসম রাজ্য কমিটি সহ সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য।

Author

Spread the News