পুরকর : প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চের সভা মালুগ্রামে
বরাক তরঙ্গ, ১৪ জুলাই : শিলচরের প্রস্তাবিত পুর নিগম এলাকার নাগরিকদের অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে রবিবার মালুগ্রাম উন্নয়ন মঞ্চ আহুত নাগরিক সভায় শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে শিলচরের সেলিব্রেশন বেনক্যুয়েট হলে অনুষ্ঠিত হয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত, কবি, প্রাবন্ধিক অতীন দাশ, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ধ্রব সাহা প্রমুখ পরিচালিত নাগরিক সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন সাধন পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, অসমের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলচরের জনজীবন গভীর সংকটের সম্মুখীন। জনপ্রতিনিধিদের অকর্মণ্যতা, উদাসীনতা এবং জেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এর জন্য মূলত দায়ী।
তিনি শিলচর পুরসভার সরকারি আধিকারিক কর্তৃক বেআইনিভাবে পুরকর বৃদ্ধি করার তীব্র বিরোধিতা করে বলেন শিলচর পুরসভাকে পুর নিগমে উন্নীত করার অজুহাতে পুর নির্বাচন আটকে রাখা হয়েছে। পৌর আইনে যেখানে একমাত্র নির্বাচিত পৌরবোর্ডকে পুরকর বৃদ্ধির অধিকার দিয়েছে সেখানে সরকারি আধিকারিক আইন ভঙ্গ করে জলকর মাসিক ১২৫ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ফি, বিভিন্ন ধরনের প্রপত্রের মূল্য, পুরসভা কর্তৃক সংগ্রহ করা জমির মূল্যায়ন শুল্ক, অট্টালিকার মূল্যায়ন শুল্ক ইত্যাদি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। এই অন্যায়ভাবে বর্দ্ধিত করের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার তিনি আহ্বান জানান। নাগরিক সভার প্রস্তাবণা পাঠ করেন মালুগ্রাম উন্নয়ন মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক বাসুদেব শর্মা। সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক ধ্রুব সাহা বলেন জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রেশন ফি, স্টাম্প শুল্ক ইত্যাদিও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে ভারত সরকার ওয়ান ন্যাশন, ওয়ান রেকর্ড তৈরির উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ইন্ডিয়া ল্যান্ড মর্ডানাইজেশন সিস্টেম চালু করে সারা দেশে জমির তথ্য অনলাইনে উপলব্ধ করার ব্যবস্থা করেছে এবং জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল জেনেরিক ডকুমেন্ট রেজিষ্ট্রেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালে শিলচরের বিভিন্ন স্থানের জমির মূল্যায়নের যে তথ্য রয়েছে তা আসাম সরকার কর্তৃক ২০২২ সালে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রকাশিত জমির মূল্যায়নের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি। ফলে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পৌর সভা, সাব রেজিস্ট্রার অফিস ইত্যাদিতে প্রদেও ফি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাছাড়া কাছাড় জেলার যেহেতু ৮০ শতাংশ জমির সঠিক তথ্য পোর্টালে নেই, তাই জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জনসাধারণকে অহেতুক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নিউ শিলচর প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ইলোরা চক্রবর্তী বলেন শিলচর শহরের প্রায় প্রতিটি সড়ক সঠিক সময়ে উপযুক্ত মেরামত না হওয়ার ফলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ পথচারী। সরকারি বিভাগ পিডাব্লিউডি ও এনএইচআইডিসিএল বিভাগের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন চিত্তরঞ্জন দাশের মুর্তির সামনে গত ২৯ জুন নিউ শিলচর এলাকার মানুষ পথ অবরোধ করেন। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ২৫ দিনের মধ্যে সড়ক সংস্কার করা হবে কিন্তু এখনও সদর্থক ভূমিকা পালনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এগিয়ে আসেনি। মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চাপ্টারের পক্ষ থেকে কৃশানু ভট্টাচার্য বলেন, শহরের জননিকাশি ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। অল্প বৃষ্টিতেই জমাজলে শহরের রাস্তাঘাট, নাগরিকদের বসতবাটি প্লাবিত হয়। বরাক নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এবং নদীবাঁধ ও স্লুইসগেটের সঠিক সংস্কার না হওয়ায় ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তির আশংকায় শহরবাসীকে উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন হিউম্যাননিটি ফাউন্ডেশনের সিহাব উদ্দিন আহমেদ, নির্মল কুমার দাস, সুব্রতচন্দ্র দাস, ডাঃ এম শান্তি কুমার সিংহ, সঞ্জীব দেবনাথ, মৃন্ময় নাথ, সঞ্জীব রায়, দিলীপ চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। মালুগ্রাম উন্নয়ন মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক কিশোর ভট্টাচার্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রদান করা প্রস্তাবগুলো সংযোজিত করে নাগরিক সভায় মূল দাবি সনদ পেশ করেন। তিনি বলেন, পুর এলাকার জনগণের মূল সমস্যা সমাধানের দাবি সহ বরাক নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ফুলেরতল থেকে হরিটিকর পর্যন্ত বরাক নদী খনন খুব জরুরি। এছাড়াও অকেজো স্লুইসগেট মেরামতের দাবিতেও সোচ্চার হতে হবে। তিনি নাগরিক সভায় প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করেন। উপস্থিত নাগরিকরা এতে কিছু সংযোজন করে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবিত কমিটিকে মনোনীত করেন।
নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রদান করা প্রস্তাবের ভিত্তিতে পৌর নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজকের নাগরিক সভা থেকে অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যকে সভাপতি, ধ্রুব সাহাকে কার্যকরী সভাপতি, সাধন পুরকায়স্থ, সিহাব উদ্দিন আহমেদ, বাবুল হোড়, সুব্রতচন্দ্র নাথ, ডাঃ এম শান্তি কুমার সিংহ, সুজিত কুমার দাস, স্বর্ণালী চৌধুরী, মহিতোষ পাল, সীমান্ত ভট্টাচার্যকে সহ সভাপতি, বাসুদেব শর্মাকে সাধারণ সম্পাদক ও কিশোর ভট্টাচার্যকে সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক, সঞ্জীব রায়, হিল্লোল ভট্টাচার্য, মৃন্ময় নাথ, আব্দুল হাই লস্কর, অরিন্দম দেব, অতনু ভট্টাচার্য, মনোজ পাল, ইলোরা চক্রবর্তী ও পান্না পালকে সম্পাদক এবং মলয় দত্তকে কোষাধ্যক্ষ, নন্দ দুলাল সাহা, আইনজীবী অজয় রায়, রাজীব রায়, সোমেন চৌধুরী, মধূসুদন কর, রঞ্জিত চৌধুরী, আলী রেজা ওসমানী, সজল বনিক, রেবা নাথ, জয় বড়দীয়া, তমাল বনিক, সারদিছ কামাই, আদিমা মজুমদার, বিশ্বজিৎ দাস, প্রদীপ নাথ, তরুণ দেব, জাদু চ্যাটার্জী, আজমল হুসেইন চৌধুরী, নিরুপণ ব্যানার্জী, অভিজিৎ ধর, নবদ্বীপ দাস, প্রবীর রায়চৌধুরী, পাবলব লস্কর, সঞ্জীব দেবনাথকে কার্যকরী সদস্য ও তমোজিৎ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দত্ত এবং দীলিপ সিং কে মিডিয়া কোর্ডিনেটর মনোনীত করা হয়। নবগঠিত মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ স্বরূপ নির্বাচিত পুরনিগম গঠিত না হওয়া পর্যন্ত জলকর ও অন্যান্য পুরকর প্রদান না করতে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও অন্যায়ভাবে বর্দ্ধিত পৌরকর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা, শিলচর শহরের প্রতিটি সড়ক সংস্কার করা, রাঙ্গিরখাড়ি থেকে মেডিকেল রোড, ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট থেকে চিরুকান্দি পয়েন্ট, সোনাই রোড, বিবেকানন্দ রোড ও তারাপুর শিববাড়ি রোড ইত্যাদি উপযুক্ত মান বজায় রেখে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করা, দিনে দুবেলা বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা, জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ২০২২ সালের মূল্যায়নকে মান্যতা প্রদান, ফুলেরতল থেকে হরিটিকর পর্যন্ত বরাক নদী খনন ইত্যাদি দাবিতে জোরালো আন্দোলন কার্যসূচি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আন্দোলনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রচারপত্র বিলি, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে পথসভা ও কমিটি গঠন এবং পুরসভা কার্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যালয়ের সামনে গণধরনা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি কার্যসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।