জাতীয় প্রেস দিবসে দুই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও এক শিক্ষাবিদকে সম্মাননা প্রদান ধলাই প্রেসক্লাবের

রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ১৬ নভেম্বর : জাতীয় প্রেস দিবসে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবকদের সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি সমাজের প্রতি সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা ও কঠিন বাস্তবতা বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ধলাই প্রেসক্লাব। রবিবার ভাগাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। ধলাই প্রেসক্লাবের সভাপতি আমির হোসেন লস্করের পৌরহিত্যে সভায় ক্লাবের পক্ষ থেকে দু’জন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক তৈবুর রহমান লস্কর এবং প্রাক্তন সাংবাদিক হরিহর ভট্টাচার্য-কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।  শিক্ষাক্ষেত্রে ও সমাজসেবায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সোনাই মাধবচন্দ্র দাস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মসজিদ সম্বনয় সমিতির সম্পাদক ও ভাগাবাজার জামা মসজিদ কমিটির সম্পাদক সাবির আহমেদ চৌধুরীকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ধলাই প্রেসক্লাবের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা জানান স্থানীয় বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস ও ধলাইয়ের অগ্রণী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাতৃভূমি সামাজিক সংস্থা।

সভায় মানপত্র পাঠ করেন সংবাদকর্মী তথা ক্লাবের সভাপতি আমির হোসেন লস্কর ও রাজীব হোসেন মজুমদার। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হরিহর ভট্টাচার্য, তৈবুর রহমান লস্কর এবং শিক্ষাবিদ সাবির আহমেদ চৌধুরীর হাতে মানপত্র তুলে দেন ক্লাবের সকল স্তরের কর্মকর্তা, মাতৃভূমি সামাজিক সংস্থার সভাপতি সিতাংশু দাস, বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস তাঁর পক্ষ থেকে সভায় উপস্থিত ১২ জন সাংবাদিককে ডায়েরি, কলম ও উত্তরীয় দিয়ে সামান্য প্রদান করেন। মাতৃভূমি সামাজিক সংস্থা উপস্থিত সাংবাদিকদের সংস্থার মহরকৃত উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা প্রদান করে। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তৈবুর রহমান লস্কর ও হরিহর ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখতে গিয়ে  সাংবাদিকতা জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, আজকের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার  যুগে সাংবাদিকতা অনেক সহজ । কিন্তু যখন আমরা সাংবাদিকতা শুরু করি, তখন পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রকাশ পর্যন্ত পদে পদে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কতটুকু কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের সেই কঠিন সময় পার করতে হয়েছে, আজকের প্রজন্ম হয়তো তা সহজে অনুভব করতে পারবে না। প্রতিকূল পরিবেশেও সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে কখনও আমরা পিছপা হইনি।”

ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস সংবাদমাধ্যমকে গণতন্ত্রের অপরিহার্য স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “সংবাদ মাধ্যমকে আমি সমাজের আয়না হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। একটি আয়না যেমন সমাজ ও বাস্তবের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে, তেমনি সাংবাদিকের কলমও সমাজের ভালো-মন্দ, দুর্নীতি ও সফলতার চিত্র তুলে ধরে। একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষ এবং নির্ভীক ভূমিকা অনস্বীকার্য।” শিক্ষাবিদ সাবির আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে তাঁদের সামাজিক ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “শিক্ষাবিদ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, জ্ঞান বিতরণ এবং সমাজকে সঠিক পথে চালিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা শিক্ষকদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সাংবাদিকেরা সমাজের নানা দিক তুলে ধরে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। সমাজ গঠনে তাঁদের এই নিরলস পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”

মাতৃভূমি সামাজিক সংস্থার সভাপতি সিতাংশু দাস তাঁর বক্তব্যে সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের দিকটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সাংবাদিকেরা দিন-রাত এক করে কাজ করেন। সমাজে দুর্নীতি দূরীকরণে এবং প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা একটি সুস্থ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।” তাই আমার আজ ক্লাবের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ক্লাবের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করতে পেরে গর্ববোধ করে। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন ধলাই প্রেসক্লাবের  সম্পাদক বিবেকানন্দ দাশ। এদিন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাম বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ শামসুল হক বড়ভূইয়া, এইচএমএ রুবেল হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক জিয়া উদ্দিন লস্কর, বাম বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক জাহান উদ্দিন লস্কর, প্রাক্তন সাংবাদিক তথা বর্তমান শিক্ষকতায় নিয়োজিত শিক্ষক সাহারুল হোসেন লস্কর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *