শ্রীভূমির ছাগলমোয়ায় বিরসা মুণ্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে জন জাতীয় গৌরব দিবস পালিত

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৫ নভেম্বর : মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল ও জেলা আয়ুক্ত প্রদীপ কুমার দ্বিবেদীর উপস্থিতিতে শ্রীভূমির জেলার পাথারকান্দি বিধানসভার লোয়াইরপোয়া ব্লকের বাজারিছড়া জিপির অন্তরগতশান্ত পাহাড়-অরণ্য ঘেরা ছাগলমোহা গ্রাম যেন শনিবার নতুন প্রাণে জেগে উঠেছিল। শতবর্ষ পেরিয়ে আজও যাঁর সংগ্রামের আগুন জনজাতি আত্মপরিচয়ের আলো হয়ে জ্বলে সেই ভগবান বিরসা মুণ্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো জন জাতীয় গৌরব দিবস। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রঙ, সুর, নৃত্য আর অসীম উচ্ছ্বাসে ভরপুর এই উদযাপন পরিণত হয় জনজাতি সম্প্রদায়ের এক অপূর্ব সমাগমে, যেখানে ইতিহাস, আবেগ ও গর্ব একসূত্রে মিলেমিশে তৈরি করে এক অনন্য উৎসব–পরিবেশ। এদিন জেলা প্রশাসনের  ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয় দেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অহংকার এবং ‘ধরতি আবা’ নামে খ্যাত কিংবদন্তি নেতা ভগবান বিরসা মুণ্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী।

এ উপলক্ষে শনিবার শ্রীভূমি জেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো জন জাতীয় গৌরব দিবস। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত জন জাতীয় গৌরব বর্ষ পক্ষ এর অংশ হিসেবে সমগ্র দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রীভূমির এই প্রত্যন্ত এলাকায় মহোৎসবের আবহে ভেসে ওঠে। বিশেষ দিনটি উপলক্ষে শ্রীভূমির লোয়াইরপোয়া ব্লকের অন্তর্গত ছাগলমোয়া ট্রাইব্যাল এমই স্কুলের মাঠ চত্বরে নানা রঙের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সঙ্গীত, নৃত্য আর উৎসবের আমেজে সকালের আকাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। হাজারও জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের আগমন এই অনুষ্ঠানকে পরিণত করে এক অনন্য মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাথারকান্দি বিধানসভার বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল। তিনি ভগবান বিরসা মুন্ডার জীবন, সংগ্রাম, আধ্যাত্মিক দর্শন, সাহসিকতা এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প, সুবিধা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কেও জনগণকে অবহিত করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শ্রীভূমির জেলা আয়ুক্ত প্রদীপকুমার দ্বিবেদী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাপতি অনিলকুমার ত্রিপাঠী, ডিডিসি দীপক জিডুং, জেলা পরিষদের সিইও মুন গগৈ, জেলা বিজেপি সভাপতি সঞ্জীব বনিক সহ প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকবৃন্দ।

দিনব্যাপী আয়োজনে হালাম, চরাই, ডিমাসা, আদিবাসী, খাসি, রিয়াং, রুকিনি বর্মন, ত্রিপুরী ও রাংলং সহ বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের শিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, লোকগান, বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলকে পরিণত করেন এক রাঙা উৎসব–চত্ত্বরে।ভগবান বিরসা মুন্ডার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠান স্থলে জনজাতি সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় খাদ্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বিভিন্ন ফুড স্টল স্থাপন করা হয়, যা দর্শনার্থীদের প্রবল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। সঙ্গে ছিল জনজাতি জনগণের তৈরি হস্তশিল্প ও বস্ত্রের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রস্থানীয় কৃষিজাত পণ্যের অস্থায়ী বিপণন কেন্দ্র স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্যাম্প এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালসহ উপস্থিত অতিথিরা স্কুল প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন। পরিবেশ সংরক্ষণে জনজাতি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয় বক্তৃতায়।এছাড়াও গুজরাটে আয়োজিত জন জাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ অনুষ্ঠানস্থলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। উপস্থিত সকলেই গভীর মনোযোগ সহকারে তা উপভোগ করেন।

এ দিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর সুর ও অবদান স্মরণ করে এক আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়।

এ দিনের অনুষ্ঠানে অসমের হার্ডথ্রর্ব জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের প্রতিকৃতিতেও গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর অনবদ্য সুর, কালজয়ী সৃষ্টি ও অসমিয়া সঙ্গীতে অবদানের স্মরণে সমগ্র পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে আবেগঘন নীরবতা যেন মুহূর্তটিতে উপস্থিত সকলেই তাঁর সুরের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন।

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উন্নয়নমূলক বার্তায় সমৃদ্ধ এই আয়োজন শ্রীভূমির জনজাতি জনগণের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও গর্বের সঞ্চার করে। ভগবান বিরসা মুন্ডার জীবনদর্শন, তাঁর সংগ্রামী চেতনা এবং সমাজের প্রতি তাঁর আত্মত্যাগের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে উপস্থিত সকলেই আগামীর পথচলায় ঐক্য, শিক্ষা, উন্নয়ন ও পরিবেশ–সহযোগিতার বার্তা তুলে ধরেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *