জগতের কল্যাণের জন্য গুরুর ভূমিকা অপরিসীম ও অতুলনীয় : তপনানন্দগিরি মহারাজ
বরাক তরঙ্গ, ২১ জানুয়ারি : প্রতি বছরের ন্যায় শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের ১৮ থেকে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা অবধি উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে সনাতন ধর্মীয় প্রবচন পাঠ করেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের থেকে আগত ওঁকাশ্বের মার্কেন্ডেয় সন্ন্যাস আশ্রমের তিন আচার্য্য কিশোর চৈতন্য মহারাজ, আচার্য্য কেশবানন্দ মহারাজ প্রমুখ মহারাজবৃন্দরা। এরপর শনিবার সকাল মঙ্গলারতি, হরিও কীর্তন সহকারে নগর পরিক্রমা, গৈরিক পতাকা উত্তোলন, শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ, শ্রীশ্রী গুরু পূজা, দীক্ষা দান, সাধুভান্ডারা ও ভক্তদের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরন, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত্রি দশটা অবধি চলা সনাতন ধর্ম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মাঙ্গলিক পঞ্চপ্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শঙ্করমঠ ও মিশনের প্রধান অধ্যক্ষ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ উনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভোলাগিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী মাধবানন্দ গিরি মহারাজ, স্বামী প্রজ্ঞানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ, বিরেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ, স্বামী অনিলানন্দ গিরি মহারাজ, রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী, যুক্তেশ্বরানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ প্রমূখ দেশ-বিদেশ থেকে আগত মহারাজবৃন্দরা।
এদিন শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, ভগবদ্গীতার বক্তা হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভগবদ্গীতার প্রতিটি পাতায় বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। ভগবদ্গীতার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে হলে শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বলে স্বীকার করে নিতেই হবে। স্বীকার করে নিয়ে বিনম্র মনোভাব সহকারে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভগবদগীতা পড়লে আমরা সহজে বুঝতে পারব এবং অন্তরে গীতার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারব। যদি এই মনোভাব নিয়ে গীতা গ্রন্থটি না পড়ি, তা হলে আমাদের কাছে এই অমূল্য শাস্ত্রগ্রন্থটি চিরকালই ভীষণ রহস্যাবৃত হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞের মধ্যে সমগ্ৰ বিশ্বের শান্তি কামনা সহ শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের কর্মাধ্যক্ষ বিজ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ সহ উক্ত শিলচর মিশনের সবাইর আন্তরিক ধন্যবাদ ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন তৎসঙ্গে অযোধ্যা রামমন্দিরের স্থাপন উপলক্ষে ২২ জানুয়ারি শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনে শ্রীরামচন্দ্রের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে এই অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটবে। স্বামী মাধবানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, গুরুর কাছেই থাকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। গুরুই শিখিয়ে দিতে পারেন সাধন প্রণালী। গুরুর সেই জ্ঞানকে ধারণ করার মতো উপযুক্ত আধার থাকতে হয়। অন্যথায় গুরু তাঁর এই রাজবিদ্যা অপাত্রে দান করেন না। তাই, জীবনের যা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান, সেই তত্ত্ব আহরণ করার জন্য শিষ্যকে উপযুক্ত হয়ে উঠতে হয়। নইলে সেই অযুত জ্ঞানরাশির নাগাল পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, শিষ্য হয়ে ওঠার জন্যও নির্দিষ্ট গুণাবলি প্রয়োজন। এবং উপস্থিত সবাই মহারাজবৃন্দরা নিজ-নিজ প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে বলেন ,গঙ্গায় যে স্নান করে সে অন্যকে পবিত্র করতে পারে না কিন্তু গীতারুপিনী গঙ্গাতে যে ডুব দিয়েছে সে নিজে যেমন মুক্ত ও পবিত্র হয়ে থাকে তেমনি অন্যকেও মুক্ত হতে বা পবিত্র হতে সাহায্য করে। যদিও গঙ্গা ভগবানের চরণ থেকে উৎপন্ন এবং ভগবদগীতা সাক্ষাৎ ভগবানের মুখপদ্ম হতে নিঃসৃত। সম্পূর্ণ উক্ত সনাতন ধর্ম সম্মেলনী সভার পরিচালনা ছিলেন শিলচর শঙ্কর মঠ ও মিশনের কর্মাধ্যক্ষ বিজ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ।
পরেরদিন ২১ জানুয়ারি শ্রীশ্রী বিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞ সহ আরো শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং ১০৮ শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের ১১৫ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে।সেদিন অন্যান্যদের মধ্যে সহযোগিতায় ছিলেন শিলচর শঙ্কর মঠ ও মিশনের পরিচালনা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত মিত্র, সহ-সভাপতি রামপ্রসাদ দেবনাথ, সম্পাদক বিপ্লব কুমার দে, কার্যকারী সদস্য রূপন দে, সুজিত মিত্র সুমন মিত্র, নিখিল মিত্র, সুজিত দে, শিখা দে, বিউটি দে, অর্চনা দে , মিন্টু দে সহ অন্যান্যরা।
প্রতিবেদক : দীপ দেব, শিলচর।