নাগ্রার শম্ভুনগরে গলা কাটা মহিলার লাশ উদ্ধার, আটক মেয়ে

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ ডিসেম্বর : শ্রীভূমি জেলা পাথারকান্দি বিধানসভার বাজারিছড়া থানা অধীন অসম মিজোরাম-ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেষা নাগ্রা পেট্রোল পোস্টের অন্তর্গত শম্ভুনগর এলাকায় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার দুপুরে এক মহিলার গলা কাটা, মস্তক বিচ্ছিন্ন রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও উত্তেজনার পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শম্ভুনগরের এক বাড়ি থেকে দীর্ঘ সময় কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। এরপরই বিষয়টি নাগ্রা পেট্রোল পোস্টে জানানো হলে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। খবর পেয়ে নাগ্রা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অভিজিত ভরালি নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘরের ভিতরে ঢুকে পুলিশ এক মহিলার মস্তক বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে। নিহত মহিলার নাম রূপজান বিবি (৫৫)। তার গলাকাটা দেহ ও বিচ্ছিন্ন মাথা দেখে পুলিশও হতবাক হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে পুলিশ এবং শুরু হয় প্রাথমিক তদন্ত। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার জন্য আশপাশের বহু মানুষ ভিড় জমায়। এদিকে, ঘটনার পর থেকেই নিহত মহিলার মেয়ে নিখোঁজ থাকায় সন্দেহ আরও গভীর হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানান যে, ঘটনার পর থেকে রূপজান বিবির মেয়ে মমিনা বেগম (৩০)-কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তের গতি বাড়ায়।

পরবর্তীতে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পুলিশ শম্ভুনগর এলাকারই আট নম্বর এলাকা থেকে অভিযুক্ত মেয়ে মমিনা বেগমকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মমিনার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, নিহত রূপজান বিবির ছেলে বাজারিছড়া থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে তিনি নিজের মায়ের হত্যার জন্য তার ছোট বোন মমিনা বেগমকেই দায়ী করেন বলে জানা গেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ মৃতদেহটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরণোত্তর পরীক্ষার জন্য শ্রীভূমি জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও সময় সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা মিলবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।এ বিষয়ে নাগ্রা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অভিজিত ভরালী জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও জানান, আটক অভিযুক্ত মমিনা বেগমকে আজ রাতে পাথারকান্দি মহিলা সেলে পাঠানো হয়েছে এবং তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে পেশ করা হবে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে শম্ভুনগর ও আশপাশের এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তে এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে বলেই আশাবাদী এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *