কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু, থেমে গেল পুলিশ কর্মী মানভানজয় চরেইয়ের জীবন

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৪ ডিসেম্বর : শেষ ডিউটি, শেষ বিদায় ফিরলেন না মানভানজয় চরেই। দেশের প্রধানমন্ত্রীর গুয়াহাটি সফরে ডিউটির সময় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত অসম পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মী মানভানজয় চরেই; শোকস্তব্ধ মাগুরা গ্রাম ও শ্রীভূমি জেলা। নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ কর্ম ও কর্তব্যের পালনের পথে জীবন দিয়ে গেলেন আরেক নীরব যোদ্ধা। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অকালে থেমে গেল এক পুলিশ কর্মীর জীবনযাত্রা। শ্রীভূমি জেলা পাথারকান্দি বিধানসভার লোয়াইরপোয়া ব্লকের বাজারিছড়া থানা অধীন কটামণি এলাকার মাগুরা পুঞ্জি গ্রামের বাসিন্দা, আসাম পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মী মানভানজয় চরেই আজ আর নেই। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ পরিবার, সহকর্মী এবং গোটা এলাকা। মাত্র ৪৪ বছর বয়সেই কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনাবসান হলো এই মৃদুভাষী, দায়িত্ববান পুলিশ কর্মীর। রেখে গেলেন স্ত্রী, এক ছোট্ট কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য স্বজন ও সহকর্মীকে যাদের চোখে আজ শুধুই অশ্রু, হৃদয়ে গভীর শূন্যতা। দেশসেবার ব্রত নিয়েই যাঁর প্রতিটি দিন কেটেছে, সেই নীরব যোদ্ধার বিদায়ে আজ ভারী হয়ে উঠেছে মাগুরা গ্রাম থেকে শুরু করে গোটা শ্রীভূমি জেলার পুলিশ বিভাগ সহ বিভিন্ন স্থরে।বাজারিছড়া থানাধীন মাগুরা গ্রামের এক কর্তব্যনিষ্ঠ ও মৃদুভাষী পুলিশ কর্মী মানভানজয় চরেই আর নেই।

হঠাৎ তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পরিবার, সহকর্মী ও গোটা এলাকা।পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির গুয়াহাটিতে নির্ধারিত সফরকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় নির্দেশে মানভানজয় চরেকে ডিউটির জন্য সেখানে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত অবস্থায় গত ২১ তারিখ, রবিবার সকালে তিনি হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গুয়াহাটির দিশপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালান। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বুধবার সকালে বাজারিছড়ার মাকুন্দা লেপ্রসি কাম জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর।

প্রয়াত মানভানজয় চরেই রেখে গেছেন স্ত্রী, একটি ছোট শিশু কন্যা এবং দুই পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-পরিজন। অকালেই পরিবারের কর্তা হারিয়ে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।জানা গেছে, তিনি আসাম পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চের অধীনে শ্রীভূমি জেলার নিলামবাজার থানায় কর্মরত ছিলেন। অত্যন্ত দায়িত্ববান, কর্তব্যপরায়ণ ও মৃদুভাষী হিসেবে তিনি সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে। সহকর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা একের পর এক শোকবার্তা প্রকাশ করেন। পরে এদিনই তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভাগীয় মর্যাদায় বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই শ্রদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীভূমি জেলা পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি (হেডকোয়ার্টার) প্রণব কলিতা, আইবি ডিএসপি মুকুট কাকতি, বাজারিছড়া থানার ওসি আনন্দ মেধি সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিক ও সহকর্মীরা। শোকাহত পরিবেশে তাঁরা প্রয়াত পুলিশ কর্মীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।পরে অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে বুধবার বিকালে খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসরণ করে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এদিন মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে কাতারে কাতারে স্থানীয় মানুষ ভিড় জমান। পুরো এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক শোকের পরিবেশ।স্বজনেরা প্রিয় মানুষটির নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসজল নয়নে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সকলেই তাঁকে শেষ বিদায় জানান।একজন কর্তব্যনিষ্ঠ পুলিশ কর্মীর এই অকালপ্রয়াণ শুধু তাঁর পরিবারের জন্য নয়, সমাজ ও পুলিশ বিভাগের জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *