দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১২ ডিসেম্বর : অল অসম মণিপুরি মেইরা পৈবি আপুনবা লুপের আয়োজনে শিলচরের গান্ধী ভবনে সকাল ৮টা থেকে ৮৬তম নুপী লাল পালন দিবস সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দিনটি ১৯০৪ ও ১৯৩৯ সালের অ্যাংলো-মণিপুরি নারীদের যুদ্ধের স্মৃতিতে পালিত হয়, যা ব্রিটিশ শোষণ ও লাল্লুপ নামক জোরপূর্বক শ্রম ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মণিপুরি নারীদের সাহসী প্রতিরোধের প্রতীক। শিলচরসহ বিভিন্ন স্থানের আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে স্মরণীয় করে তোলেন।অনুষ্ঠান
এএএমএমএসইউ-এর সভাপতি বেণী মিশ্রের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর স্বচ্ছ ভারত অভিযান, সাহসী মায়েদের পাশাপাশি কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গর্গের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। সকাল ১০টার মধ্যে প্রধান অতিথি বরাক উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়, বিশেষ অতিথি উদারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোমসহ মণিপুরি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারপারসন রীনা সিংহ, মণিপুরি সাহিত্য পরিষদ আসামের সভাপতি ড. বীরমণি সিংহ, এএএমএসইউ-এর সভাপতি সানাহাল সিংহ, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আরামবম নন্দাবাবু সিংহ, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী কমিশনার জুনালি দেবী, তম্মি চিনগমি মণিপুরের সভানেত্রী ইয়ামবেম মোমোন লেইমা, মণিপুর চানুরা লৈসেম মারুপ মাচা লেইমার সভানেত্রী ওয়াংখৈময়ুম আমুসানা, এমওয়াইএফএ-এর সভাপতি থাংজম ব্রোজেন, মণিপুরের মাপি কাউন্সিলের মহাসচিব মইরাংথেম নেতাজি, সমাজকর্মী ড. যায়বাম নুরু্ল হক এবং অসম মণিপুরি মুসলিম মেইরা পৈবি সংঘের সভাপতি সঙ্গীতা বেগমসহ অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হন। সভাপতিত্ব করেন বেণী মিশ্র।
সভাপতি মণ্ডলীর সদস্যদের সংবর্ধনার পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও উদ্বোধনী গান পরিবেশিত হয়।

সংস্থার সম্পাদক বিজয়া সিংহ স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং মেমতোবি সিংহ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রাক্তন মেইরা পৈবি ইমা ও বিভিন্ন ইউনিট কমিটিকে অবদানের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়।দুই নির্বাচিত বক্তা লক্ষীপুরের বস্ত্র ও হস্ততাঁত বিভাগের পরিদর্শক বিজয়া সিংহ “বরাক তামপক্তা মৈইতৈই খুনাইগি সেনমিতলাঙ্গি ফিবম ফাগাথনবদা মৈইতৈই নুপিসিঙ্গি থৌদাঙ অমসুং ফিশালঙ্গি হৌজিক ওইরিবা ফিবম” এবং শ্রীভূমির রবীন্দ্র সদন গার্লস কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মেমচাটন সিংহ “ঙাশিগি খুনাইদা নুপিসিংনা থেংনারিবা চেইথেং অমাদি নুপী লাঙ্গি সাফু” বিষয়ে আলোচনা করেন। এরপর অতিথি, বিশেষ অতিথি ও প্রধান অতিথির বক্তব্য এবং সভাপতির ভাষণ অনুষ্ঠিত হয়। ‘নুপী লান’ শীর্ষক একাঙ্ক নাটক মঞ্চস্থ হয় এবং শেষে সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক নন্দিতা সিংহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অন্যান্য উপস্থিতদের মধ্যে এ.এ.এম.এমপি.এ.এলের উপদেষ্টা মনিতন সিংহ, সত্যজিৎ সিংহ, আহ্বায়ক শ্যাম কুমার সিংহ, বিপ্লব সিংহ, সুরেন সিংহ, নন্দমোহন সিংহ প্রমুখ। প্রধান অতিথি কৌশিক রাই আয়োজকদের প্রশংসা করে অ্যাংলো-মণিপুরি নারীদের যুদ্ধের ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই আন্দোলনগুলো অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে নারীদের নেতৃত্বে হয়েছিল এবং প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর স্মরণ করা হয়। মণিপুরের মেইরা পৈবির দীর্ঘ ঐতিহ্য উল্লেখ করে তিনি সম্প্রতি জাতিগত সংঘর্ষে তাদের ভূমিকার কথা বলেন এবং অসম সরকারের সহায়তার পরিকল্পনা জানান—কনফারেন্স হল, আদিবাসী নারীদের বাজার, মণিপুরি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা। তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যের ২৫টি নতুন মণিপুরি মন্দির নির্মাণ হবে (প্রতিটির ব্যয় ৩০ লক্ষ টাকা), কাজ শুরু হবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে।
তিনি মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রশংসা করেন। বিধায়ক মিহির কান্তি সোম বলেন, মণিপুরি সম্প্রদায়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এবং সরকার তাদের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।অনুষ্ঠানে ২৫ জন ত্যাগী মণিপুরি মহিলা এবং ৫০টি গ্রামের মেইরা পৈবি কমিটির সদস্য-সম্পাদিকাদের সম্মানিত করা হয় মশাল প্রদানের মাধ্যমে। আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নেন, আগামী নুপী লান পালন দিবস উদারবন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের একটি গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকেরা মন্ত্রী কৌশিক রায় ৭ দফা দাবির স্মারক লিপি হাতে তুলে দেন।


