সোনাই নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারে নগাঁও প্রশাসনের বড় পদক্ষেপ, উচ্ছেদ অভিযান, উদ্ধার ৩৮ বিঘা  জমি

বরাক তরঙ্গ, ৬ নভেম্বর : মৃতপ্রায় সোনাই নদীকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এক কঠোর পদক্ষেপে নগাঁও জেলা প্রশাসনের। সামাগুড়ি সার্কলের অন্তর্গত ভকতগাঁও এলাকায় নদীর দুই তীরের প্রায় ১০০টি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি অঞ্চলের অন্যতম বড় নদী-উদ্ধার অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ বসতিস্থাপনের কারণে সোনাই নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। একসময়ের প্রাণবন্ত নদীটি ধীরে ধীরে তার প্রশস্ততা ও প্রবাহ হারাতে থাকে। প্রায় ৩৮ বিঘা সরকারি জমি জুড়ে অস্থায়ী কুঁড়েঘর ও স্থায়ী কংক্রিটের ঘর গড়ে ওঠায় নদীটি যেন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। জেলা কমিশনার দেবাশিস শর্মার নেতৃত্বে ভোরবেলায় বুলডোজার নামিয়ে কাঁচা ও পাকা—উভয় ধরনের অবৈধ কাঠামো সরানো হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, আগেই নোটিস দেওয়া থাকায় অধিকাংশ পরিবার সহযোগিতা করায় উচ্ছেদ অভিযান শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। শর্মা জানান, “প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার নিজেরাই স্বেচ্ছায় তাদের ঘর ভেঙে দিয়েছে। এই নাগরিক দায়িত্বশীলতা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।”

এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় জমি প্রশাসনের গাফিলতিও সামনে এসেছে। অভিযানের মধ্যেই এক লাট মণ্ডল (ভূমি কর্মকর্তা) সরকারি জমিতে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। জেলা কমিশনার সঙ্গে সঙ্গে সেই অবৈধ রাস্তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, সে সাধারণ নাগরিক হোক বা সরকারি কর্মকর্তা।

অভিযানের সময় সংকটের মানবিক দিকও চোখে পড়ে। যেসব পরিবারদের বিকল্প জমি বা বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, তাদের অনেককেই শিশুকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে জিনিসপত্র গুছাতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন—সবচেয়ে অসহায় পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ধিং সার্কলের অধীনে শালনাবারি, আহোম গাঁও ও রৌমারি বিল সহ অন্যান্য দখলকৃত এলাকাতেও শীঘ্রই একই ধরনের অভিযান চালানো হবে।

জেলা কমিশনার বলেন, “সবাইকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা অবশিষ্ট দখলদারদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার অনুরোধ করছি, না হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।” নদীর দুই তীর পরিষ্কার করে সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নগাঁও প্রশাসন সোনাই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আইনের শাসন ও পরিবেশগত দায়িত্ববোধকে আরও দৃঢ় করতে চায়। এই উদ্যোগ জেলায় টেকসই উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *