সংসদে ‘জয় হিন্দ’ ও ‘বন্দে মাতরম’ নিষিদ্ধ, তীব্র প্রতিক্রিয়া মমতার ব্যানার্জির

২৭ নভেম্বর : সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। রাজ্যসভার সচিবালয়ের একটি বুলেটিনে জানানো হয়েছে, অধিবেশন চলাকালীন সাংসদরা বক্তব্যের শুরু বা শেষে আর ‘জয় হিন্দ’ বা ‘বন্দে মাতরম’ বলতে পারবেন না। পাশাপাশি ‘ধন্যবাদ’-এর মতো শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ বেড়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে শীতকালীন অধিবেশন। নতুন উপরাষ্ট্রপতি সি পি রাধাকৃষ্ণন প্রথমবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে অধিবেশন পরিচালনা করবেন। তার আগেই সচিবালয় জানিয়ে দিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে যদি সাংসদরা অহেতুক এই স্লোগান উচ্চারণ করেন, তবে সংসদের সময় নষ্ট হয় এবং সংসদের গাম্ভীর্য নষ্ট হয়। তাই স্লোগান নয়, গাম্ভীর্য বজায় রাখতে বলা হয়েছে সকলকে। একই সঙ্গে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা, অভিযোগ তুললে প্রমাণ পেশের বাধ্যবাধকতা, এবং চেয়ারপারসনের মন্তব্যের সমালোচনায় রাশ টেনে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দেশজুড়ে মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পালিত হল ‘বন্দেমাতরম’-এর ১৫০ বছর। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে যে ‘বন্দেমাতরম’ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে নতুন উদ্দীপনা এনে দিয়েছিল, তাকেই কি তবে সংসদে উচ্চারণ করা অশালীন, ‘ডেকোরাম’-বিরুদ্ধ? ১৯৫০ সালে সংবিধান সভায় বন্দেমাতরমকে গ্রহণ করা হয়েছিল ‘জাতীয় গীত’ হিসেবে। এমনকি সংসদের অধিবেশনের সমাপ্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবির সময় নেপথ্যে বেজে ওঠে বন্দেমাতরমই। আরও প্রশ্ন, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নিজেও যা উচ্চারণ করেন, সেই ‘জয় হিন্দ’ কি তবে সংসদের জন্য অনুপযুক্ত?

এ বিষয়ে সবচেয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এই নির্দেশ গণতন্ত্রের আত্মার ওপর সরাসরি আঘাত। ‘বন্দে মাতরম’ আমাদের জাতীয় গান। ‘জয় হিন্দ’ প্রতিটি ভারতীয়ের স্লোগান। এগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা মানে ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা।” তাঁর অভিযোগ, বাংলার পরিচয় ও কণ্ঠরোধের প্রয়াস চলছে। “বাংলা ভারতের বাইরে নয়, ফুটনোটও নয়— এই দেশের গর্বিত অংশ,” মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।

তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—“আমাদের ইতিহাস, পরিচয় বা সংসদে কণ্ঠস্বর কাউকে মুছে দিতে দেব না। বন্দে মাতরম। জয় হিন্দ। জয় বাংলা।”

শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগেই এই নির্দেশ ঘিরে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত যে আরও ঘনীভূত হতে চলেছে, তা স্পষ্ট এবং আগামী সপ্তাহে সংসদে তার প্রতিধ্বনি জোরালোভাবে শোনা যাওয়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *