শ্রদ্ধা, সম্মান আর অনুপ্রেরণার অঙ্গনে শিক্ষক দিবস উদ্যাপন কাছাড়, ২৫ জনকে সংবর্ধনা
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৫ সেপ্টেম্বর : শিক্ষক দিবসের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার আবহে সেজে উঠল শিলচরের গান্ধী ভবন প্রাঙ্গণ। ৬৪তম শিক্ষক দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে শুক্রবার এক অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কাছাড় জেলা প্রশাসন ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয় , জেলা শিক্ষক দিবস উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে। ভারতবর্ষের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, দার্শনিক ও শিক্ষক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তাঁর স্মৃতির প্রতি নিবেদিত হলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নিরঞ্জন রায়ের মূল প্রবন্ধ। প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করে তিনি তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে ড. রাধাকৃষ্ণনের জীবন ও দর্শনকে স্মরণ করেন। তাঁকে আখ্যা দেন “জ্ঞানতরঙ্গের বাতিঘর, যাঁর চিন্তাধারা আজও ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার পথকে আলোকিত করে চলেছে।” তাঁর কথায়, রাধাকৃষ্ণন ছিলেন বিনয়, পাণ্ডিত্য ও প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার প্রতীক।

এই বছরের শিক্ষক দিবসের থিম “ইন্সপায়ারিং দ্য নেক্সট জেনারেশন অফ লার্নার্স” প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যবইয়ের সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না। “শিক্ষকরা জ্ঞানের বাহক নন মাত্র, তাঁরা আলোকবর্তিকা, যাঁরা জ্বালিয়ে দেন কৌতূহল, উদ্ভাবনশীলতা ও নৈতিকতার প্রদীপ,” মন্তব্য করেন তিনি।
প্রফেসর রায় তিনটি আধুনিক শিক্ষার স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করেন সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি ও সহমর্মিতা। তিনি বলেন, গান, ক্রীড়া, চিত্রকলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মতো পাঠ্যবহির্ভূত শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ঘটানোই তাঁদের প্রকৃত শিক্ষা। তাঁর ভাষায়, “আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা মানে শুধু চাকরির প্রস্তুতি নয়, জীবনের প্রস্তুতি। সাহস নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, মূল্যবোধ রক্ষা করা ও ন্যায় ও সহানুভূতির সমাজ গড়ে তোলাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।”

অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসাবে উপস্থিত শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী তাঁর বক্তব্যে শিক্ষকদের জাতি গঠনের প্রকৃত কারিগর বলে অভিহিত করেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধে দৃঢ় থেকে আধুনিক সমাজের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পরামর্শ দেন। তাঁর কথায়, “একটি প্রগতিশীল জাতির ভিত দাঁড়িয়ে থাকে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের কাঁধে।”

অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, (শিক্ষা বিভাগ) অন্তরা সেন তাঁর বক্তব্যে সার্বিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কেবল পাঠ্যক্রমে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্রগঠন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলায় শিক্ষকদের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ ড. অপ্রতিম নাগও শিক্ষকদের রূপান্তরমূলক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে বিদ্যালয় পরিদর্শক গণেশ হরিজন, এইএস, অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। তিনি দেশগঠনে শিক্ষকদের আত্মনিবেদিত জীবনের ঐতিহ্যকে স্মরণ করেন।
দিনটিকে আরও তাৎপর্যময় করে তুলল রাজ্যপালের উদ্যোগ “বরিষ্ঠ শিক্ষক সম্মান ২০২৫”। এর আওতায় রাজ্যের প্রবীণতম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মান জানানো হয়। কাছাড় জেলায় জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব, বিদ্যালয় পরিদর্শক গণেশ হরিজন তিনজন প্রবীণ শিক্ষককে তাঁদের বাসভবনে গিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন। গামছা, সম্মানপত্র, ফল ও মিষ্টির ঝুড়ি দিয়ে তাঁদের আজীবন শিক্ষাসেবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। পাশাপাশি, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ও ব্লক পর্যায়েও ৩৪ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে একইভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এদিন ২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। তাঁরা হলেন ডিএনএনকে গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের বিষয় শিক্ষক পরিতোষ দে, নেহেরু হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের বিষয় শিক্ষিকা বাসনা দাস, বিএনএমপি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পিনাক চক্রবর্তী, ললিত জৈন মেমোরিয়াল আতাল বস্তি হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র চন্দ্র দাস, তরণী পুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিদারুল ইসলাম তালুকদার, সূর্য কুমার হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা পাল, আর সি বিপি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক শান্তনু সেন, লক্ষ্মীচরণ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নজরুল হক লস্কর, ৬৭২ নং বিজয়পুর বড়রামপুর এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক প্রসাদ সাহু, শিব কলোনি এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা রাউত, খাসপুর গ্রান্ট নয়াগ্রাম এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু ঘোষ, ২০৬ নং দক্ষিণ বোয়ালজোর এলপি স্কুলের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মীরানি গোয়ালা, ১৮২ নং সোনাই মডেল এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালাম লস্কর, ৭৮৪ নং কাঞ্চালাল এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনিতা চক্রবর্তী, পানগ্রাম এম ই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমিতা দেব, আব্দুল মোসাব্বির এমই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রশিদ আহমদ মজুমদার, রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ এমই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ধর, গুমড়া বাজার এমই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসরফ উদ্দিন বড়ভূইয়া, কালীপ্রসাদ এমভি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু নন্দন মজুমদার, সোনাবাড়িঘাট এমভি স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা বেগম মজুমদার, ছোটমামদা হিন্দি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র কুমার, মদন কুলবতী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার সিংহ, বাদ্রিপার হিন্দি হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সঙ্গীত শিক্ষক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, লালাং গার্ডেন এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রজবাসী হাজাম ও নন্দনকানন টি গার্ডেন এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূপতি সরকার। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মানপত্র সহ চাদর, উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া।