ররুণছড়া-কুকিছড়া পঞ্চায়েতের দু’টি কেন্দ্রে ভোট বয়কট উপজাতিদের
প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ প্রশাসন, “নো রোড নো ভোট” শ্লোগানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি কুকিছড়ায়
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ২ মে : বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যার্থ প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিরা । অবশেষে রাস্তার নরকদায়ক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন “নো রোড নো ভোট” শ্লোগান দিয়ে ভোট বয়কট করলেন দক্ষিণ হাইলাকান্দির উপজাতি অঞ্চলের ভোটাররা। পঞ্চায়েত ভোটে নজির বিহীন এমন ঘটনায় জেলা জুড়ে বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। রাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম পর্যায়ের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সারা জেলা জুড়ে যখন জনগনের মধ্যে উন্মাদনার পারদ চড়ছিল, ঠিক সেই সময় দক্ষিণ হাইলাকান্দির ররুণছড়া-কুকিছড়া গাঁও পঞ্চায়েতের দু-দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোটদান থেকে বিরত রইলেন প্রায় হাজারের অধিক ভোটার।বরুণছড়া-কুকিছড়া পঞ্চায়েতের দু দুটি গ্রামীণ ওয়ার্ডের প্রায় হাজারের বেশি উপজাতি ভোটার ভোট বয়কট করে প্রতিবাদে মুখর হলেন। ৫৫ নং ভোটকেন্দ্র বাংলাবাসা এলপি স্কুল এবং ৫৬ নং ভোটকেন্দ্র কুকিছড়া গভঃ জুনিয়র বেসিক স্কুলের অধীনে থাকা ভোটাররা ভোট বয়কট করে ভোটদান থেকে বিরত রইলেন। কাঁঠালতলি থেকে কর্নবস্তি পর্যন্ত রাস্থা নির্মাণ না হওয়ার ফলে বিক্ষুব্ধ উপজাতি ভোটাররা বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেন।
শুক্রবার দক্ষিণ হাইলাকান্দি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত বরুণছড়া-কুকিছড়া পঞ্চায়েতের ৫ নং এবং ৬ নং গ্রামীণ ওয়ার্ডের ভোটাররা নিজেদের ন্যায্য দাবিতে ভোট বয়কট করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে ভোট গ্রহণ কর্মীরা যথা সময়ে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে থাকলেও কার্যত তাদের ঠোঁটো জগন্নাথের মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। তাঁদের অনুরোধ-উপরোধেও ভোটাররা ভোট দিতে এগিয়ে যাননি।

বিক্ষোভ সমাবেশে অভিযোগ করে বলা হয় দীর্ঘ দিন থেকে কাঁটালতলি থেকে কর্ণবস্তি পর্যন্ত রাস্তা দাবি জানিয়ে আসা সত্ত্বেও সরকারের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি৷ বারবার জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকপত্র পেশ করা হলেও আশ্বাস ছাড়া রাস্তা আর পাওয়া যায়নি। এমনকি চলতি বছরের ১০ জানুয়ারিও জেলা প্রশাসনের কাছে রাস্তাটির দাবিতে স্মারকপত্র পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি বলে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন।

তাঁরা বলেন, ১৯৩৭ সাল থেকে এখানে উপজাতিদের বসবাস। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসবের স্বাদ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত উপভোগ করলেও তারা সামান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। স্কুল, রাস্তাঘাট, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জল ইত্যাদি সামান্য সুবিধা পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জুটে না। ইতিপূর্বে মিজোদের অসমের জমি জবর দখলকেও তারা প্রহরীর মতো প্রতিরোধ করে রাজ্যের সীমা বজায় রেখেছেন। বিনিময়ে উপেক্ষা ছাড়া কিছুই পাননি। বিক্ষোভকারীরা বলেন, স্কুল থাকলেও রাস্তার জন্য শিক্ষকরা আসেন না। বিকল্প হিসাবে অন্য স্কুলে যেতে হলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হয়। স্থানীয় শিশুদের এত দূরের রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এতে উপজাতি শিশুরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তারা নিজেদের এসব ন্যূনতম দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ভোটে তারা ভোট বয়কট করবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।