যৌতুকের দাবিতে বধু নির্যাতন, মামলা, নেই ধরপাকড়, সরব মাতৃশক্তি
বরাক তরঙ্গ, ১ ডিসেম্বর : যৌতুকের দাবিতে বধূ নির্যাতনের ঘটনা আজকাল অহরহ ঘটছে। চূড়ান্ত পরিণতিতে হয়তো ডিভোর্স হচ্ছে কিংবা তো নির্যাতনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক গৃহবধূ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে এলো। পরিচর্চার অভাবে তিন বছরের শিশু কন্যা পা কেটে ফেলেছে। কিন্তু মায়ের মনে মমতার ঢেউ খেলেছে। খবর পেয়ে বাবার বাড়ি থেকে দৌড়ে শিশু কন্যাকে দেখতে ছুটে যায় মা। মা ও শিশু কন্যার আবেগঘন পরিস্থিতির মধ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মায়ের উপর তীব্র আক্রমণ শুরু হয়। ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে কিল, ঘুষি, লাথি মারেন বলে অভিযোগ। দিনদুপুরে রাস্তার মধ্যে স্বামী ও স্ত্রীর এমন কাণ্ডে ও হাল্লা চিৎকারে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে উভয়কে ছাড়িয়ে দেন। এরপর কোন ক্রমে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসে পালংঘাট আউট পোস্টে এজাহার দায়ের করেন নির্যাতিতা মহিলা। কিন্তু তিন দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এনিয়ে ধরপাকড়ের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এজাহারের বয়ান মতে ধলাই থানার অন্তর্গত পুনিরমুখ গ্ৰামের মেয়ের সঙ্গে রাখাল টিলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন আহমেদের সামাজিক ভাবে বিবাহ হয় প্রায় তেরো বছর আগে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সাহাব উদ্দিন যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে মুক্তা বেগমের উপর। পারিবারিক ও সামাজিক মানসম্মানের কথা বিবেচনা করে স্বামীর নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে থাকে মুক্তা বেগম। এরই মধ্যে তাদের দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু পুত্র সন্তান জন্ম না দিয়ে দুইটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া বধূ নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে গত আট মাস আগে বাবার বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয় মুক্তা বেগম। গত বৃহস্পতিবার মায়ের কাছে খবর আসে যে তিন বছরের কন্যা সন্তান দুর্ঘটনাগ্ৰস্থ হয়ে পা কেটে ফেলেছে। তা শোনে মা মুক্তা বেগম ছুটে যায় সেখানে। কিন্তু মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আদর করার সময় হঠাৎ সেখানে পৌঁছে সাহাব উদ্দিন আহমেদ। পৌঁছেই তার উপর আক্রমণ করে বসে। এমনকি একসময় টানা হেচড়া করে মাটিতে ফেলে দেয়। সঙ্গে কিল ঘুষি মারতে থাকে। মেয়েটির হাল্লা চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে তাকে রক্ষা করেন। সেখান থেকে কোনক্রমে ফিরে এসে পালংঘাট আউট পোস্টে ওই দিনই স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের এবং মারধরের জন্য মামলা দায়ের করেন। পরিতাপের বিষয় তিন দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই মামলায় যেমন দরকার কোন খবর নেই। এতে নির্যাতিত মহিলার ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা দূর অস্ত বলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মাতৃশক্তি বেসরকারি সামাজিক সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি শীঘ্রই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নির্যাতিত মহিলাকে ন্যায় বিচার পাইয়া দিতে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।
