নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগ বন্ধ করার জোরালো দাবি সেভ এডুকেশন কমিটির

২৬ ফেব্রুয়ারি : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ কে সর্বতো ভাবেই জনস্বার্থ বিরোধী উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এক স্মারকপত্র প্রদান করল অল ইণ্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি (AISEC)। সোমবার কমিটি স্মারকপত্রের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয় যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ সর্বতো ভাবেই জনস্বার্থ বিরোধী এবং এতদ্বারা দীর্ঘদিনের সামাজিক এবং শৈক্ষিক প্রথা পরিবেশ বিনষ্ট হবে, সমাজে উচ্চ নীচের ভোদাভেদ সুদৃঢ় ভিত্তি লাভ করবে, শিক্ষার ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরনের মাধ্যমে বৃহৎ পুঁজির স্বার্থসিদ্ধি করবে৷ শিক্ষার সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকীকরণই যে এই শিক্ষানীতির অঘোষিত উদ্দেশ্য-স্মারক পত্রে দ্বার্থহীন ভাষায় তাও উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারকপত্রে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে এই শিক্ষানীতির দ্বারা রাজ্য সরকারগুলির নিজস্ব শিক্ষানীতি  তৈরী করার সংবিধান স্বীকৃত অধিকার পূরণ করা হয়েছে।
   
কমিটির পক্ষ থেকে অতিসত্বর জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রয়োগ বন্ধ করার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে এবং পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত স্বর্বদ্জন মান্য অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মতামত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানসম্মত সমাজমুখী স্বর্বদ্জনীন শিক্ষানীতি প্রনয়নের দাবি ও উত্থাপন করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ এর বিরোধিতা করে অতিদ্রুত আরেকটি শিক্ষানীতি প্রনয়নের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সমগ্র দেশের অভিজ্ঞ  শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদরা। এঁদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে উল্লেখনীয় হচ্ছেন ইরফান হাবিব (ইতিহাসবিদ), রাম পুনিয়ানি, (বোম্বে আই আইটির ভূতপূর্ব অধ্যাপক, প্রকাশ এন শাহ (গুজরাট সাহিত্য পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি, প্রাক্তন উপাচার্য চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী, এল জওহর নেপাল মুরি নেসা, প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য এস মহাদেবন (আইআইএসসি, বেঙ্গালুরু) জে এন ইউ’র অধ্যাপক সচ্চিদা -নন্দ সিনহা, আর মহালক্ষী, মৃদুলা মুখার্জি সুচেতা মহাজন, ঘনশ্যাম শাহ, দেবাশিস গোঁসাই, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতি, স্বাতী পেগী, নন্দিতা নারাইন, সাবিত্রী সিং, প্রবীন কুমার, পূজা শর্মা, ঋতু খান্না, বিনয় কুমার, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি নাদিম রেদাবি (সম্পাদক, ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেস), সাইদুর রহমান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য অমিতাভ গাঙ্গুলি, ভাস্কর গুপ্ত, সুমন্ত নিয়োগী, গৌতম মাইতি, দীপ্তেন মিশ্র, আমিত কর্মকার, সমর মণ্ডল, অর্ঘ্য নন্দী, দেবাশিস চক্রবর্তী (আসাম বিশ্ববিদ্যালয়), এইচ শ্রীকান্ত (এন ই এইচ ইট), নবনীত শর্মা (হিমাচল কেন্দ্রীয় বিশ্ব বিদ্যালয়), সইফ (জামিয়। মিলিয়া ইসলামিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়) অমিত রায় চৌধুরী (আই আই ই এসটি), অরুনাভ মিশ্র (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), জিৎ কাউর (পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যক্ষ নীলেশ মাইতি, সারদা দিক্ষীত এবং অন্যান্যরা৷

স্মারকপত্রের প্রতিলিপি দেশের প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে যাতে নিজ নিজ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ গ্রহণ ও চালু করা থেকে বিরত  থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে৷ এ দেশীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক নীতি বিরোধী এই প্রচেষ্টার বিপরীতে প্রতিটি রাজ্যে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও শৈক্ষিক ঐতিহ্য অনুসারে রাজ্যের অভিজ্ঞ শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের মতামত সাপেক্ষে নীতি ও ধাঁচা তৈরী করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে৷
এআইএসইসি আরেকটি আবেদনপত্রে সমস্ত রাজনৈতিক দল সমূহকে অনুরোধ জানায় তারা যেন এই জনবিরোধী শিক্ষানীতি ও সূচীকে বর্জন করেন এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নিজ নিজ দলীয় প্রচারপত্রে এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেন যে ক্ষমতায় এলে তারা এই বৃহৎ-পুঁজি স্বার্থবাহী শিক্ষানীতির বদলে বিজ্ঞান ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং প্রচলন করবেন যেখানে মৌলবাদী শিক্ষার বিপরীতে বিবিধের মাঝে মহান মিলনের আদর্শই উচ্চারিত হবে৷ যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের  (সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক ) কাছে আবেদন পত্রটি পাঠানো হয়েছে৷ তাদের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিআই,  সিপিআই(এম), এআইটিসি, বিজেডি, এজিপি, এআইইউডিএফ, এএপি, এসপি, ডিএমকে, এআইডিএমকে, রাইজর দল৷ ছবি প্রতীকী।

Author

Spread the News