ক্রীড়া জগৎ এখন রাজনৈতিক নেতাদের দখলে, উষ্মা ষষ্টি-সৌমিক-শুভাশিসের
ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৭ নভেম্বর : খেলোয়াড়রা যেখানে প্রাধান্য পায় না, সেখানে খেলাধুলার উন্নতির আশা করা বৃথা। কানা কলসিতে জল ঢাললে সেটা কোনওদিনও ভরবে না। একবার এই পুরস্কার মঞ্চের দিকেই দেখুন না। খেলোয়াড় বা ক্রীড়া প্রশাসকের সংখ্যা বেশি, না অন্য জগতের লোকদের ভিড় বেশি ? শিলচর কোনও ব্যতিক্রম নয়। গোটা দেশেই এই হাল। বিশেষ করে রাজনীতির লোকেরাই ক্রীড়া জগত দখল করে নিয়েছে। কোনও রাখঢাক না করে একশ্বাসে কথাগুলি বলে ফেললেন এক কালের সাড়া জাগানো রাইট ব্যাক ষষ্ঠী দুলে। ২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক আশিয়ান কাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন রাইট ব্যাক ছিলেন প্রাক্তন এই ভারতীয় তারকা। কিছুদিন আগে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফিতে শিলচর সফর করে গেছেন সেই ইস্টবেঙ্গল দলের অধিনায়ক তথা সেন্টার ব্যাক সুলে মুসা। ঘানার বাসিন্দা মুসার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম আফ্রিকান ফুটবলের কথা। আর, এবার ষষ্ঠীর কাছ থেকে ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান দৈন্যদশা নিয়ে কথা হল।
শিলচর ভেটারেন ফুটবল ক্লাবের তৃতীয় আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক ফুটবল আসরে সাউথ কলকাতা ভেটেরন্স দলের হয়ে খেলতে এসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ষষ্ঠীরা। এই দলে রয়েছেন এক কালের লাল-হলুদের লেফট ব্যাক তথা জাতীয় দলের তারকা সৌমিক দে। রয়েছেন শুভাশিস রায়চৌধুরীর (গোলরক্ষক শুভাশিস নন) মতো প্রাক্তন ফুটবলার। খেলাধুলায়, বিশেষ করে ফুটবলে ভারতের অবনতি সম্পর্কে তাঁদের ভাষ্য-রাজনীতিই সবকিছু গিলে খাচ্ছে। ষষ্ঠী তো এই ইস্যুতে বেশি সরব। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার কোনও একটা কমিটি তৈরি করতে হলে বড় মাথাগুলো কোনও না কোনও রাজনৈতিক নেতার হতে হবে। এরপর কিছু বাকি থাকলে প্রাক্তন খেলোয়াড় কিংবা যারা ঠিকঠাক কাজ করেন তাদের ভাগ্যে জোটে। খেলার জগতে যাদের কেউ চেনে না, জানে না, তারাই ভাল চেয়ার পায়। ওরা খেলার উন্নতির জন্য কতটাই বা কাজ করবে?’ কোনও জড়তা ছাড়াই বলে গেলেন ইস্টবেঙ্গলে বাইচুং ভুটিয়ার সহযোদ্ধা। ভারতীয় দল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলে দেন, কোচের গুডবুকে থাকা ফুটবলাররাই দলে সুযোগ পায়।
এখনকার আইএসএলের চেয়ে আগের আই লিগকে। বেশি সফল ও কার্যকর ছিল বলে মন্তব্য করলেন সৌমিক। আই এস এলে অবনমন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এই লিগ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, আই এস এল শুরু হওয়ার আগে আই লিগই ছিল ভারতের এক নম্বর ফুটবল গিল। এমনকি গত কয়েক বছরও আগেও দুই লিগ চলাকালীন আই লিগকে এক নম্বরে রাখা হয়েছিল। এখন আই লিগের টেলিভিশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না দেখে তিন তারকা ফুটবলারই হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, আই লিগের মতো বড় আসর অবশ্য টেলিভিশন সম্প্রচারের আওতায় আয়োজিত হওয়া উচিত।
শুভাশিস আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ক্রোয়েশিয়ার ইগর স্টিমাচের পর এবার স্পেনের মানোলো মার্কেজকে ভারতীয় দলের কোচ করা হয়েছে। ভারতীয় দলের জন্য ভারতীয় কোচের কি অভাব? একজন ভারতীয় কোচ হলে খেলোয়াড়দের সুবিধা- অসুবিধা সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে পারতেন। প্রাক্তন কোচ প্রয়াত অমল দত্তের একান্ত ভক্ত শুভাশিস শিলচরে সেরা মিডফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘অমলদাকে ওরা খুব একটা সুযোগ দেয়নি। অথচ ক্লাব ফুটবলে তিনি কী অসম্ভব রকম সফল ছিলেন।’
