১৯শে-র শহিদদের স্মৃতিতে শিলিগুড়িতে তৈরি হবে স্মৃতিস্তম্ভ, জানালেন সমিতির কর্মকর্তা
বরাক তরঙ্গ, ২০ মে : পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে উনিশে মে শহিদদের স্মৃতিতে তৈরি হবে স্মৃতিস্তম্ভ। একথা জানালেন আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির প্রতিনিধিরা। সমিতির বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা শিলচরে পৌঁছে শহিদ দিবসে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা জানান। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির শিলিগুড়ি শাখার পক্ষে সজল কুমার গুহ বলেন, শিলিগুড়ির মেয়র কথা দিয়েছেন আগামী বছর শিলিগুড়িতে শিলচরের উনিশে মের শহিদদের শ্রদ্ধায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হবে। এটি নির্মিত হয়ে গেলে উদ্বোধনের সময় এই সময় শিলচরের ভাষাপ্রেমীদের শিলিগুড়িতে উপস্থিত থাকতে তিনি আবেদন জানান। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, হ্যামিলটনগঞ্জ, ত্রিপুরার শান্তিপুর ও বিলোনিয়া শাখার প্রতিনিধিরা শহিদদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান।
পরে হোটেল ইলোরা হেরিটেজে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট কলামচি ও সমাজচিন্তক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, শুধুমাত্র ১৯ মে-র দিনে শহিদদের স্মরণ করলে হবে না। ব্যবহারিক জীবনে বাংলার প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই সঠিক অর্থে ১৯ এর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। তিনি বলেন, বরাকের বাঙালিরা একটা প্রান্তিক এলাকায় রয়েছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পক্ষে নয়। একমাত্র ঐক্যবদ্ধভাবে ভাষার মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে সামনে রেখে এগোতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির জলপাইগুড়ি শাখার ড. কোয়েলা গাঙ্গুলি বলেন, শিলচর রেলস্টেশনকে ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণ করার ব্যাপারে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবগত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে এনওসি দেওয়ার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও কোনও জবাব দেয়নি। এক্ষেত্রে শিলচর রেল স্টেশন নামকরণের তিনি তীব্র দাবি জানান। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, একুশের ভাষা শহিদকে যেভাবে সম্মান জানানো হয় ঠিক সেইভাবে ১৯ এর ভাষা শহিদকে নিয়ে এমন একটা আগ্রহ নেই। আর সমিতির পক্ষ থেকে তারা শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গে ১৯শে মে যথেষ্ট প্রচার করেছেন। প্রত্যেকটি বাংলাভাষী এলাকায়১৯ এর বার্তা পৌঁছে যাক এটাই তিনি চান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কবি-লেখক কস্তুরী হোম চৌধুরী বলেন, যেকোনও জাতির অনুপ্রেরণা হলো তার ভাষা। যেকোনও মূল্যে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। ১৯শে মে শহিদরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তাই তাদের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। বিশিষ্ট সমাজকর্মী সাধন পুরকায়স্থ বাংলা ভাষার উপর বারবার নেমে আসা আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সংগ্রাম করেই বাংলাভাষীকে টিকে থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই পারে ভাষার উপর আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে। শিলচর, স্টেশনকে ভাষা শহিদ রেলস্টেশন নামকরণে কেন দেরি হচ্ছে এই প্রশ্ন তিনি তুলেন। যেখানে অসম সাহিত্য সভা এই দাবি সমর্থন করেছে, তখন কেন এই কাজটি করা হচ্ছে না। আকসার উপদেষ্টা রূপম নন্দী পুরকায়স্থ বলেন ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণে আগের সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ভাষার উপর নেমে আসা বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। ১৯৭১, ১৯৮৬ বারবার ভাষার উপর আঘাত নেমে এসেছে। তাই বাংলা ভাষাপ্রেমীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে শুধুমাত্র এই ভাষার মর্যাদা রক্ষা সম্ভব হবে।

শরিফুজ্জামান লস্কর বলেন, মাতৃভাষার ওপর যদি আক্রমণ হয় তাহলে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা কে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশে মাতৃভাষা একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। সংস্থার উত্তর-পূর্ব শাখার উপদেষ্টা হারান দে বলেন, শহীদের উত্তরাধিকার আমরা বহন করে চলেছি। ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন মৌমিতা গাঙ্গুলি সুদর্শন সওদাগর। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন লিটন দেবনাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির শিলচর শাখার সাধারণ সম্পাদক চয়ন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বাইরে থেকে যে প্রতিনিধিদের আনা হয়, সেটার উদ্দেশ্য হলো উনিশের বার্তা যাতে প্রতিটি বাংলা ভাষী এলাকায় পৌঁছে যায়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পি ড. শ্রাবণী সরকার। এছাড়াও ১৯ এর উপর লেখা সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী বাপি রায়। অনুষ্ঠানে আগত প্রতিনিধি মানপত্র দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।