সঙ্কুচিত হচ্ছে কাছাড় জেলার মানচিত্র, বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিমা হাসাওয়ের পরিধি

বরাক তরঙ্গ, ২৮ আগস্ট : দু’টি সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সঙ্কুচিত হচ্ছে কাছাড় জেলার মানচিত্র। এনিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যায় সরকারি এক চিঠির সূত্র থেকে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কাছাড় জেলা কমিশনার কার্যালয়ে পাঠানো গভট নম্বর লেটার এইচএডি-ইসিএফ-৩২৮১১৩/১/১৭৮ তারিখ ২৩/৭/২০২৫ এই পত্রের বিষয়বস্তু এমনটাই। এই পত্রে বিষয় হিসেবে লিখা রয়েছে, ক্লোজ ২.২ এবং ২.৩ সম্পর্কিত বাস্তবায়ন যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিএনএলএ এবং ডিপিএসসি এই দু’টি সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ২৩ জুলাই ইস্যু করা রাজ্য সরকার কর্তৃক কাছাড় জেলা কমিশনার কার্যালয়ে পাঠানো পত্রের মূল সারমর্ম হচ্ছে, কাছাড় জেলার লক্ষীপুর সমজেলার অধীন রাজাবাজার উন্নয়ন খণ্ডের অন্তর্গত ১৯টি গ্রাম ডিমা হাসাও জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে কাছাড়ের রাজারবাজার উন্নয়ন খণ্ডের অধীনে থাকা ১৯টি গ্রামের জনসংখ্যা, সেসব গ্রামে বসতি করা মানুষের ভাষা, গ্রামের রাজস্ব চক্রের নাম, জেলার নাম, পরিবারের সংখ্যার তালিকা তৈরি করে রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাছাড় জেলার লক্ষীপুর থেকে ডিমা হাসাও জেলায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যেসব গ্রাম সেগুলো হল ডিপো ভোটার সংখ্যা ৩৩৫, কুমাছড়া ভোটার সংখ্যা ১২৫৬, কালীনগর ভোটার সংখ্যা ৪৪২, জেমব্রু ভোটার সংখ্যা ৫৫৪, পুটাছড়া ভোটার সংখ্যা ৩৫৯, হরিনগর ভোটার সংখ্যা ১৮৫০, ধরমনগর ভোটার সংখ্যা ৪৬৫, থাইপুনগর ভোটার সংখ্যা ৪৯৩, রাইলং ভোটার সংখ্যা ৫০১, মাসাপ ভোটার সংখ্যা ২৮৯, দলইছড়া ভোটার সংখ্যা ৫৩২, ছনপুর ভোটার সংখ্যা ৩৫২, কড়িইবিল ভোটার সংখ্যা ৩৪০, কনকপুর ভোটার সংখ্যা ৩৮৩, জয়পুর ভোটার সংখ্যা ১৯১৬, অয়াঠিলিং ভোটার সংখ্যা ২৬৫, লাংলাছড়া ভোটার সংখ্যা ৪০৭, লাডুমা ভোটার সংখ্যা ৫৩৬, লোদি ভোটার সংখ্যা ২৬১। এই ১৯টি গ্রামে সর্বমোট ১১,৫৩৬ জন ভোটার রয়েছেন। বিপরীতে কমপক্ষে পাঁচগুণ জনসংখ্যা হবে তা নিশ্চিত। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ১৯টি গ্রাম কাছাড় জেলার লক্ষীপুর সমজেলা থেকে ডিমা হাসাও জেলায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। রাজ্য সরকারের হিল অ্যারিয়া বিভাগের সচিব টিটিডি দাওলাগুপু (আইএএস) গত ২৩ জুলাই কাছাড়ের জেলা কমিশনার, কার্বি আংলংয় জেলা কমিশনার, পশ্চিম কার্বি আংলংয় জেলা কমিশনার, ডিমা হাসাও জেলা কমিশনার, হোজাই জেলা কমিশনার ও হিড়িম্বা জাস্টিস ফোরামের সভাপতি, সচিবের কাছে পত্র প্রেরণ করে বিষয়টি অবহিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

এই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ডিমা হাসাও জেলার ডিএনএলএ এবং ডিপিএসসি সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চারটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাছাড় জেলার ১৯টি গ্রাম ডিমা হাসাও জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নর্থ কাছাড় হিলস অটোনোমাস কাউন্সিলের সিইএম দেবোলাল গারলোসার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাজ্য সরকারের হিল অ্যারিয়া বিভাগের সচিব টিটিডি দাওলাগুপু প্রেরিত পত্র পেয়ে কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলা কমিশনার গত ১৮ আগস্ট সিআরকে, ১২/২০২৫/৪৫ নম্বরে লক্ষীপুরের সার্কল অফিসারকে এক চিটি পাঠান। এই চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উল্লিখিত ১৯টি গ্রামের বর্তমান অবস্থান, ভৌগোলিক দিক নির্দেশনা, জনসংখ্যা, ভাষা ইত্যাদির বিবরণ তৈরি করে প্রতিবেদন জমা করতে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে লক্ষীপুরের সার্কল অফিস থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি একেবারে গোপন রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার পক্ষের কেউই মুখ খুলতে নারাজ। কাছাড় জেলার ১৯টি ভিলেজ ডিমা হাসাও জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সংবেদনশীল এই বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় এত গোপনীয়তা কীসের ইঙ্গিত বহন করছে। এই ১৯টি ভিলেজে ডিমাসা, বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলিম সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। একটি পত্রে উল্লেখ রয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল এসব এলাকা পরিদর্শন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। বাস্তবে একমাত্র ডিমাসা সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া কেউই জানেন না তাদের বসতবাড়ি ডিমা হাসাও জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ডিমা হাসাও জেলা, অটোনোমাস কাউন্সিল, রাজ্য সরকারের হিল অ্যারিয়া বিভাগ, কাছাড় জেলা কমিশনার কার্যালয়, লক্ষীপুরের সার্কল অফিসার কার্যালয়ের মধ্যে এনিয়ে অনেক চিঠিপত্রের আদান প্রদান হয়েছে। বিষয়টি যাতে কোনও অবস্থায় কেউ জানতে না পারে, এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। আজও বিষয়টি ১৯টি গ্রামের মানুষের অজানা রয়ে গেল। তারা হয়তো কোনও একদিন ঘুম থেকে উঠে জানতে পারবেন, তারা আর কাছাড় জেলার বাসিন্দা নন। এখন থেকে তারা ডিমা হাসাও জেলার অন্তর্ভুক্ত নাগরিক।

উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের হিল অ্যারিয়া বিভাগের সচিব টিটিডি দাওলাগুপু আগে লক্ষীপুরের মহকুমাশাসক হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লিখিত গ্রামগুলো নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল রয়েছেন।
সূত্র : দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ, ছবি সংগৃহিত।

Spread the News
error: Content is protected !!