রমজানের শেষ জুম্মায় শিলচর বড় মসজিদে মুসল্লিদের ঢল
।। মিলন লস্কর।।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ মার্চ : শুক্রবার ছিল জুমাতুল বিদা’ অর্থাৎ এ বছরের রমজান মাসের শেষ জুম্মার নামাজ। পুরো রমজান মাস জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা রোজা পালন এবং বিশেষ প্রার্থনা-দোয়ার পর সারা দেশের সঙ্গে বরাক উপত্যকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমরাও নিজনিজ মহল্লায় শেষ জুম্মার নামাজে অংশ নেন। জুমাতুল বিদা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পূণ্যময়দিন হওয়ায় উপত্যকার ঐতিহ্যবাহী শিলচর বড় মসজিদ সহ জেলার প্রতিটি মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। এদিনের জুমাতুল বিদার খুৎবায় প্রতিটি মসজিদের খতিব বারবার উচ্চারণ করেন’ আলবিদা, আলবিদা, ইয়া শাহরু রমজান।’ অর্থাৎ বিদায়, বিদায় হে মাহে রমজান। রহমত, বরকত এবং মুক্তির মাস রমজানের শেষ জুম্মায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে উপস্থিত হন মুসল্লিরা। এমনিতেই প্রতি সপ্তাহের জুম্মার দিন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। তদুপরি রমজান মাস হওয়ায় এবং রোজার শেষ জুম্মাবার হওয়ায় ওইদিনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উপত্যকার ঐতিহ্যবাহী শিলচর বড় মসজিদে আল বিদা জুম্মার নামাজে অংশ নিতে শুক্রবার সকাল এগারোটা থেকে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্ত সহ জেলার দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে। জুম্মার নামাজের আজানের পূর্বেই চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের প্রতিটি তলার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদের বেসমেন্ট, ওজুখানা এবং লাইব্রেরি কক্ষে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এদিন শিলচর বড় মসজিদে পাঁচ হাজারের অধিক মুসল্লি জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন বলে কমিটির কর্মকর্তারা জানান।
নামাজের পূর্বে মসজিদের প্রধান ইমাম মওলানা সাব্বির আহমদ লস্কর রমজান মাসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, বিশ্ব মুসলিমের কাছে রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পূণ্যময় মাস। এই মাস কোরান অবতীর্ণের মাস,পাপ ক্ষলনের মাস, সংযম পালনের মাস। এই মাস দান খয়রাতের মাস। এই মাসের নামাজ রোজা সহ প্রতিটি কাজের সওয়াব অর্থাৎ পূন্য অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক। মওলানা সাব্বির আহমদ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামর্থ্যবানরা এমাসে বেশিবেশি করে গরীব-দুঃখী এবং অসহায়দের দান খয়রাত করুন। এই দানের বিনিময়ে শেষ বিচারের দিন পূণ্যের পাল্লা ভারী হবে। তিনি সবাইকে হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দর এবং সুষ্ঠু সমাজ গঠনে অংশীদার হবার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে মওলনা সাব্বির আহমদ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের নিকটাত্মীয় সহ অন্য কারুর কাছে ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করুন। ঋণমুক্ত না হলে আপনারা শেষ বিচারের দিন বিপদের সম্মুখীন হবেন। সেসময় আপনাকে উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে আসবে না। সবশেষে ইমাম বলেন, আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন রমজানের মত পূণ্যময় মাস পেয়েও আমার উম্মত (অনুসারী) যদি নিজের পাপ মোচন করতে পারে না, তাহলে তার মত ‘ হতভাগা’ আর কেউ নেই।

জুম্মার নামাজ শেষে ইমাম সকল মুসল্লিদের নিয়ে কাতরকন্ঠে দেশের শান্তি সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধি কামনা সহ বিশ্বশান্তির জন্য আল্লাহার কাছে দোয়া করেন। সেইসঙ্গে ফিলিস্থিনি মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে অবিলম্বে সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করার কাতর আর্জি জানান। এদিন জুম্মার নামাজের আগে শিলচর বড় মসজিদের সহকারি ইমাম মওলানা সাকির আহমদ মজুমদারও সংক্ষিপ্ত ভাবে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,রমজান মাসে প্রতিটি মসজিদে নামাজির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এমনকি যে সারা বছরের মধ্যে একদিনও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন না এমন ব্যক্তিও রমজান মাসে শেষ রাতে সেই নামাজ পড়েন।মওলানা আফসোস করে বলেন, কিন্তু রমজান মাস শেষ হতেই আবার মসজিদগুলিতে মুসল্লিদের সংখ্যা কমতে থাকে। তিনি বিশেষ করে যুব সমাজকে নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায় করার আহ্বান জানান।

এদিন শিলচর বড়মসজিদে নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের বের হতে প্রায় একঘন্টা লেগে যায়। শিলচর বড় মসজিদ ছাড়াও কাছারি মসজিদ, ইটখোলা ঈদগাহ মসজিদ, তারাপুর ইন্ডিয়া ক্লাব সংলগ্ন মসজিদ ও লক্ষীপুর রোডের দরগা মসজিদেও রমজানের শেষ জুম্মায় প্রচুর সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজে অংশ নেন। রমজানের শেষ জুম্মাবার যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জেলার পুলিশ প্রশাসন থেকে শিলচর শহর ও শহরতলীর সহ সর্বত্র বিশেষ টহলধারীর ব্যবস্থা করা হায়। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।