বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ালেই সম্মান, ‘রাহ-বীর’ প্রকল্প চালু করল কেন্দ্র
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৮ জুলাই : এ দেশের রাস্তায়, প্রতিদিনই ঘটে যায় অজস্র দুর্ঘটনা। ব্যস্ত শহরের মোড়ে, ফাঁকা হাইওয়ের প্রান্তে বা অচেনা কোনো গ্রামপথে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে যায় সময়। আহত মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, ভিড় জমে ঠিকই, সাহায্যের হাত বাড়ে না। কেউ ভয় পান পুলিশি জেরা হবে কি না! কেউ ভাবেন অকারণে ঝামেলায় জড়িয়ে যাবেন না। কিন্তু সেই মানসিকতা বদলাতে এবং যারা সত্যিই নির্ভয়ে এগিয়ে আসেন, তাঁদের সম্মান জানাতে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র সরকার।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের তরফে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল ‘রাহ-বীর’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে রাস্তায় ফেলে না রেখে যাঁরা তৎক্ষণাত হাসপাতালে পৌঁছে দেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা। এমন মানবিক সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধকে সমাজের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, ‘রাহ-বীর’ প্রকল্পের অধীনে কোনও ব্যক্তি যদি গুরুতর দুর্ঘটনায় আহত কাউকে দুর্ঘটনার পরের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে যেটিকে চিকিৎসকরা বলেন ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হাসপাতালে ভর্তি করতে সাহায্য করেন, তবে তাঁকে দেওয়া হবে নগদ ৫,০০০ টাকা ও একটি সরকারি স্বীকৃতির শংসাপত্র। যদি তিনি একসঙ্গে একাধিক প্রাণ বাঁচান, তবে সর্বাধিক ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, সারা দেশের মধ্যে থেকে প্রতিবছর নির্বাচিত ১০ জন সর্বোত্তম ‘রাহ-বীর’কে দেওয়া হবে জাতীয় সম্মান এবং ১ লক্ষ টাকা করে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রক মনে করছে, এই প্রকল্প কেবল মানুষের মনোবল বাড়াবে তা-ই নয়, রাস্তায় বিপদে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর একটি সামাজিক আন্দোলনকেও জোরদার করবে। মন্ত্রকের এক আধিকারিক বললেন, “দুর্ঘটনার পর দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। অথচ অনেকেই এগিয়ে আসেন না, হয়রানির ভয়ে। আমরা চাই মানুষ জানুক, তাঁদের পাশে আছে সরকার আইনি সুরক্ষা আছে, এবার আর্থিক পুরস্কারও থাকছে।”
আইনের সুরক্ষা অবশ্য বহু আগেই নিশ্চিত হয়েছে। ২০১৯ সালে সংশোধিত মোটরযান আইন এবং ২০২০ সালের নিয়ম অনুযায়ী, আহতকে সাহায্য করা ব্যক্তিকে তাঁর সম্মতি ছাড়া কোনওরকম পুলিশি হয়রানি করা যাবে না। এবার সেই সুরক্ষার সঙ্গে যোগ হল কৃতজ্ঞতার হাতছানি।
পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতিও যথেষ্ট স্বচ্ছ রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় যে বা যারা সাহায্য করেন, তাঁদের পুলিশ বা হাসপাতাল থেকে একটি লিখিত স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সেই নথি জেলা শাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে যাবে। যাচাই-বাছাই করে প্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে অর্থ। রাজ্যস্তরে মনিটরিং কমিটি নজরদারি চালাবে। মন্ত্রক জানিয়েছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে পুরস্কারের টাকা সাত দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। এই উদ্যোগ যে কতটা প্রয়োজনীয়, তা বোঝা যায় এমন অনেক ঘটনার দিকে তাকালেই।
এমন অসংখ্য নামহীন-অজানা মানুষ আছেন, যাঁরা বিপদে প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়েছেন অন্যকে। তাঁদের জন্যই এ স্বীকৃতি। সরকারি হিসাব বলছে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আহতের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। অথচ, দুর্ঘটনার পর প্রথম এক ঘণ্টা ঠিকমতো কাজে লাগানো গেলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
সরকারের আশা, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে সাহস আর দায়িত্ববোধ জাগবে। রাস্তায় দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আর কেউ পিছিয়ে থাকবেন না। সমাজে বাড়বে সহমর্মিতা আর মানবিকতা। মানুষ মানুষের জন্য, “রাহ-বীরদের” হাত ধরেই আরও অনেক প্রাণ ফিরে পাক নতুন আলো।