কাছাড়ে শুরু হচ্ছে ‘খেল মহারণ ২.০’: ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মিলনমেলা
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ জানুয়ারি : কাছাড় জেলায় ক্রীড়া ও সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয়ে এক অসাধারণ আয়োজন ‘খেল মহারণ ২.০’-এর জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেগা ইভেন্ট। মঙ্গলবার জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সভাকক্ষে, অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত (ক্রীড়া ও সংস্কৃতি) যুবরাজ বরঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই ইভেন্টের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে ।
অতিরিক্ত আয়ুক্ত যুবরাজ বরঠাকুর তার উদ্বোধনী বক্তব্যে জানান, “খেল মহারণ ২.০ ক্রীড়া সংস্কৃতির মেলবন্ধনের এক অসাধারণ উদাহরণ। এই ইভেন্ট আমাদের জেলার ঐতিহ্য ও প্রতিভার প্রদর্শনকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুবসমাজকে আরও সক্রিয় এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে চাই।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই আয়োজন শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণার মঞ্চ, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পাবে।
অতিরিক্ত আয়ুক্ত বরঠাকুর ক্রীড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথাও এই বৈঠকে তুলে ধরেন। তিনি জানান, ঝুমুর নৃত্যের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা আরেকটি বড় আকর্ষণ। ১১ ফেব্রুয়ারি টাউন ক্লাবে, ঝুমুর নৃত্যের জোনাল প্রশিক্ষণ এবং মহড়া অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কাছাড় সহ শ্রীভূমি,হাইলাকান্দি এবং ডিমা হাসাও জেলার প্রতিভাবান বাছাই করা প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন।আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটির সরু সোজাও স্টেডিয়ামে মূল পর্বের অনুষ্ঠানে কাছাড় জেলার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ১৬০ জন নির্বাচিত শিল্পী একযোগে ঝুমুর নৃত্যে অংশগ্রহণ করবে এবং একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উপস্থাপন করবে।
যুবরাজ বরঠাকুর বলেন, “ঝুমুর নৃত্য আমাদের ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

উল্লেখ্য ,কাছাড় জেলার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত ১৬০ জন ঝুমুর শিল্পীকে, ১৩জন পেশাদার প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সহকারী আয়ুক্ত তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত, জেলা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন আধিকারিক, দীপা দাসের নেতৃত্বে এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে , খেল মহারণ ২.০ ইভেন্টের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তালিকায় রয়েছে ফুটবল, কাবাডি, ভলিবল, সাইক্লিং এবং অ্যাথলেটিক্স। প্রতিযোগিতাগুলি অনুষ্ঠিত হবে লক্ষিপুরের লাবক টি গার্ডেন এবং উদারবন্দের ডিএন হাইস্কুল মাঠে। দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে শিলচর পুরসভা কার্যালয়ে এবং সাঁতার প্রতিযোগিতা ডিএসএ সুইমিং পুলে। প্রতিটি ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের ক্রীড়া দক্ষতা এবং চেষ্টার মিশ্রণে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

অতিরিক্ত আয়ুক্ত যুবরাজ বরঠাকুর সমগ্র অঞ্চলের নাগরিকদের এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিকে এই ইভেন্টে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “খেল মহারণ ২.০ শুধু কাছাড়ের জন্য নয়, গোটা রাজ্যের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হতে চলেছে। আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এই প্রদর্শনী শুধু ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিভাকে উন্নীত করবে না, বরং এটি নতুন প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।”
‘খেল মহারণ ২.০’-এর মাধ্যমে কাছাড়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। এই আয়োজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে একতা ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।