দুগ্ধ উৎপাদকদের জন্য রাজ্য সহায়তা প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর

বরাক তরঙ্গ, ২০ জুলাই : অসমে গো-পালন, দুগ্ধ উৎপাদন ও সমবায় বিপ্লব গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে এক অনুষ্ঠানে সংগঠিত দুগ্ধ খাতের অন্তর্ভুক্ত উৎপাদকদের জন্য প্রতি লিটার দুধে ৫ করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নতুন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ৬০১টি দুগ্ধ সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত ২০,০০০-র বেশি দুগ্ধ উৎপাদক উপকৃত হবেন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য এই প্রকল্পে ১০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অসমে প্রতিদিন প্রায় ২৯ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়, কিন্তু পূরবী ও সীতাজখলা সমবায় সমিতির মাধ্যমে বাজারে আসে মাত্র ১ লাখ লিটার।” গুজরাট ও কর্ণাটকের তুলনায় অসম অনেক পিছিয়ে, তাই ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার দুধ প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এই লক্ষ্যপূরণে সমবায় সমিতি ও উৎপাদকদের সক্রিয় ভূমিকা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য বলেও তিনি জানান। এই প্রকল্পে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদকরা প্রতি লিটারে ৫ রাজ্য সাহায্য পাবেন। ভবিষ্যতে এই সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে।

দুগ্ধ উৎপাদকদের জন্য রাজ্য সহায়তা প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর

পূরবী ডেইরির সম্প্রসারণ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি সম্প্রতি পূরবী ডেইরির উৎপাদন ক্ষমতা ৬০,০০০ লিটার থেকে ১.৫ লাখ লিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০’ সম্মেলনে আমূল এবং ন্যাশনাল ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (NDDB)-এর সঙ্গে অসম সরকারের চুক্তি অনুযায়ী গুয়াহাটির রানিতে দৈনিক ১ লাখ লিটার প্রক্রিয়াকরণের একটি নতুন প্রকল্প শুরু হবে। পূরবী ডেইরির ক্ষমতা ৩ লাখ লিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। শিলচরের ৫,০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্লান্ট ইতিমধ্যে “নর্থ ইস্ট ডেইরি ফুড লিমিটেড”-এ হস্তান্তর করা হয়েছে। বরপেটা, নলবাড়ি, বজালি, ধেমাজি, ডিব্রুগড়, যোরহাট, বোকাখাত—এই জেলাগুলিতে নতুন নতুন প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলমান।

দুগ্ধ উৎপাদকদের জন্য রাজ্য সহায়তা প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে রাজ্যে ৪,০০০ নতুন দুগ্ধ সমবায় সমিতি গঠন করে দুধ প্রক্রিয়াকরণের পরিমাণ ১০ লাখ লিটারে পৌঁছানো হবে। এর মাধ্যমে অসম উত্তর-পূর্ব ও অন্যান্য রাজ্যে দুধ রপ্তানির ক্ষমতা অর্জন করবে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে রাজ্য সাহায্যের টাকা উৎপাদকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। খিরার্তি গরু কেনার জন্য প্রাথমিক পুঁজি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

রাজ্য সরকার ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে ২.১৬ লাখ হিমায়িত শুক্র ক্রয় করেছে। এতে ২৭,৭৪৮ বাছুর জন্ম নিয়েছে। গির গরু ও স্থানীয় লখিমী গরুর সংকর প্রজননের মাধ্যমে বেশি দুধ দেওয়া জাত গঠনের উদ্যোগ চলছে। দুধের গুণমান নিশ্চিত করতে ৫টি স্থানে পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। গো-পালন ও সমবায় বিপ্লবের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই প্রথম রাজ্যে দুগ্ধ উৎপাদকদের গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা হয়েছে। তারা এখন অসমের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ।”

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী গুয়াহাটির পঞ্জাবারিতে পূরবী ডেইরির সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভূমিপূজন করেন। বলেন, ১০৪.৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ডেইরির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৫ লাখ থেকে ৩ লাখ লিটার হবে।

অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, মুখ্য সচিব ড. রবি কোটা, এনডিডিবি-র চেয়ারম্যান ড. এম শাহ সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Spread the News
error: Content is protected !!