সিউইইটি পরীক্ষা পড়ুয়ার উচ্চ শিক্ষার পথ রুদ্ধ করবে : তপোধীর
বরাক তরঙ্গ, ২১ মে : নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ এর মধ্যদিয়ে শিক্ষার বেসরকারিকরণের যে নীল নক্সা তৈরি করা হয়েছে তারই অন্যতম পদক্ষেপ হল সিইউইটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার পথ রুদ্ধ করতেই নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার আয়োজিত নাগরিক সভায় কথাগুলো বলে এর বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য।
এ দিন শিলচরের ট্রাঙ্করোড থাকা সিটিভিওএ কার্যালয়ে সিইউইটি পরীক্ষা নিয়ে বরাকের পড়ুয়াদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলায় ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির বিরুদ্ধে শিলচরের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সভায় সভাপতিত্ব করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার পথ রুদ্ধ করতেই নেওয়া হচ্ছে। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি, এক নীল নক্সার এক পদক্ষেপ সিইউইটি পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেন। তিনি কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে সিইউইটি পরীক্ষার ফলাফলকে গুরুত্ব না দেওয়ার আহ্বান জানান।

এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন পুরপতি তমালকান্তি বনিক, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সম্পাদক অজয় রায়, মার্চ ফর সায়েন্সের কৃষাণু ভট্টাচার্য, ইয়াসি’র সভাপতি সঞ্জীব রায়, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত, অধ্যাপক অজয় রায়, এআইডিএসও’র জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য, বরাক ভ্যালি ডেভেলপমেন্ট ওর্গেনাইজেশন এর আহ্বায়ক সাধন পুরকায়স্থ, ফোরাম ফর স্যোশাল হারমনির অরিন্দম দেব, সিআরপিসিসি এর সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য, সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির কাছাড় জেলা সভাপতি দীপঙ্কর চন্দ, সহ-সভাপতি সুব্রতচন্দ্র নাথ, নারী মুক্তি সংস্থার সম্পাদক স্নীগ্ধা নাথ, কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থার সুকল্পা দত্ত, মাতৃভাষা সুরক্ষা মঞ্চের সীমান্ত ভট্টাচার্য, ভাষা আইন সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল ভট্টাচার্য, সারা ভারত বাংলা ভাষা মঞ্চের কাছাড় জেলা সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমেদ, বিশ্বজিৎ দাস, নীহারেন্দু পুরকায়স্থ, কমল চক্রবর্তী, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, ফারুক লস্কর প্রমুখ।
এ দিনের নাগরিক সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি স্মারকলিপি তৈরি করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অসমের শিক্ষামন্ত্রী এবং ডাইরেক্টর অফ হায়ার এডুকেশন এর কাছে ই-মেল যোগে পাঠানো হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয় বরাক উপত্যকা থেকে বহু দুরে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে এখানকার ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দেওয়া খুবই ব্যায়বহুল ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া বহু ছাত্র ছাত্রী সিইউইটি পরীক্ষার ব্যপারে অবহিত না থাকায় পরীক্ষা দিতে পারে নি। করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলার বহু ছাত্র যানজটের জন্য কাছাড় জেলার পরীক্ষা কেন্দ্রেই পৌঁছাতে পারেনি। তাই এই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে কোন অবস্থাতেই ছাত্র ছাত্রীদের কলেজে ভর্তি করা চলবে না। বরং অতীতে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্র ছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হয়েছিল সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এবারও ভর্তি করতে হবে।
উল্লেখ্য, বরাক উপত্যকার ছাত্র ছাত্রীদের স্নাতকস্তরে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি কর্তৃক পরিচালিত সিইউইটি পরীক্ষায় বাংলা, পরিবেশ বিজ্ঞানের পরীক্ষা কেন্দ্র বরাক উপত্যকার বাইরে যথাক্রমে আইজল, শিলং, আগরতলা, কোকড়াঝাড়, গুয়াহাটি, যোরহাট, ডিব্রুগড় ইত্যাদি স্থানে করার প্রতিবাদে শিলচরের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।