সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব বিপন্নের আওয়াজ তুলে ৮০ দশকের মতো আতঙ্কগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে : এসইউসিআই
বরাক তরঙ্গ, ৮ সেপ্টেম্বর : অসমের অসমিয়া-অনসমিয়া, হিন্দু-মুসলমান, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু জনগণের সংগ্রামী ঐক্য এবং সংহতি অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের অসম রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বলা হয়েছে যে অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই জটিল হয়ে পড়েছে। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, তীব্র বেকার সমস্যা, বিকাশহীন বিধবস্ত অর্থনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি ইত্যাদি রাজ্যের জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত জনসাধারণকে প্রতিদিন পিষে মারছে।
এই পরিস্থিতিতেই অসম সহ সমগ্র দেশে পুঁজিবাদী শোষণের অনিবার্য পরিণামে মুষ্টিমেয় ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে আর কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এই জীবন যন্ত্রনা মোকাবিলা করতে যখন জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য এবং প্রকৃত বামপন্থী ভাবধারায় লাগাতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন ঠিক তখনই রাজ্যের জনগণের মধ্যে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক, উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী চিন্তা ভাবনার বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার উদগ্র প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এও বলা হয় যে এই জ্বলন্ত পরিস্থিতি এবং পুঁজিবাদী শোষণের স্বরূপকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রাজ্যের মেহনতি জনগণকে ভাষা ও ধর্মের নামে বিভক্তের এক মারাত্মক অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। রাজ্যের প্রধান জনগোষ্ঠী অসমিয়া ভাষী জনগণের মনে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব বিপন্নের আওয়াজ তুলে পুনরায় বিগত শতাব্দীর ৮০ দশকের মতো আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে।
দলের পক্ষ বলা হয় যে জাতি- ধর্ম- ভাষা- বর্ণ নির্বিশেষে রাজ্যের আপামর জনসাধারণ অসমিয়া ভাষা এবং সংস্কৃতিকে রাজ্যের প্রধান ভাষা, অগ্রগন্য সংস্কৃতি বলে মনে করেন এর সাথে একাত্মতা গড়ে তুলে ভাষা, সংস্কৃতির উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানও রেখেছেন ও রাখছেন। এই অবস্থায় রাজ্যের অসমিয়া, অনসমিয়া, হিন্দু- মুসলিম সকল জনগণের দুর্ভেদ্য এবং দুর্বার ঐক্যই অসমীয়া ভাষা, সংস্কৃতির অগ্রগণ্য ভূমিকাকে অক্ষুন্ন রাখার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্যারান্টি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সমস্ত ধরনের বিভাজনবাদী, সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা এবং কার্যকলাপ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে পারলেই অসমিয়া ভাষা, সংস্কৃতির ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে এবং রাজ্যের ভৌগলিক সংহতি রক্ষার্থে তা এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন। এই ঐতিহাসিক প্রয়োজনে জাতি- ভাষা- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে রাজ্যের জনগণের প্রতি দলের পক্ষ থেকে ঐকান্তিক আহ্বান জানিয়ে বলা হয় যে সমস্ত ধরনের প্ররোচনাকে অগ্রাহ্য ও ব্যর্থ করে মেহনতী জনগণের ঐক্যকে চোখের মণির মতো অক্ষুন্ন রাখতে হবে এবং জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সমাধানে জাতি- ধর্ম- ভাষা- বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রকৃত বামপন্থী আন্দোলনের বুনিয়াদ আরও শক্তিশালী করতে হবে।