‘বেদুইনর পৃৃথিবীত ফুটবলর ঢৌ’-কাতার বিশ্বকাপ দুই মলাটে বাঁধাই করলেন সুবোধ মল্ল বরুয়া 

ইকবাল লস্কর____
২১ ফেব্রুয়ারি : বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রেসবক্সে বসেছে ম্যাচ দেখার স্বপ্ন স্বার্থক করেছেন সুবোধ মল্ল বরুয়া। পুরো একমাস কাতারের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করেছেন ফুটবলের শ্রেষ্ঠ লড়াই। গত ২০২১ সালে কোভিডের কঠিন বিধিনিষেধের মধ্যেও টোকিও অলিম্পিক গেমস কভার করে নজির গড়েছিলেন অসমের প্রথম সারির এই ক্রীড়া সাংবাদিক। শিলচরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার লাইব্রেরি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসার পর তাঁর মুখ থেকে শুনেছিলাম টোকিওর গল্প। এবার, মানে গত বছরের ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপেও অ্যাক্রিডিটেশন নিয়ে মাঠে বসে ম্যাচ কভার করলেন সুবোধদা। তাঁর পত্রিকায় বেরিয়েছে এর দৈনিক রিপোর্ট। কিন্তু এরপরও বাকি থেকে গিয়েছিল অনেক কিছু। বিশ্বকাপের মতো মহোৎসবের সব কিছু কি আর পত্রিকার পাতায় লিখে রাখা যায়! অনেক লেখাই তো আরও সমৃদ্ধ। যে স্মৃতিগুলো বারবার রোমন্থন করতে ইচ্ছা করে। তাই দুই মলাটে বাঁধাই করার মতো উন্নত ভাবনা নিয়ে কাজ করেছেন সুবোধ মল্ল বরুয়া। এর‌ই ফসল “বেদুইনর পৃথিবীত ফুটবলর ঢৌ” নামের দলিল গ্রন্থ। মির্জার মালিয়াটা অফসেট প্রেস এই ব‌ইটির প্রকাশক। সুন্দর প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন রাজ্যের আরেক স্বনামধন্য ক্রীড়া সাংবাদিক পার্থ চক্রবর্তী। বিশ্বকাপের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সহ অনেক নথি, পাস ইত্যাদির ছবিও রয়েছে এই ব‌ইটিতে। একজন ক্রীড়া সাংবাদিককে টুর্নামেন্ট কভার করতে গেলে কতটা পরিশ্রম করতে হয়, এই ব‌ই হাতে নিলে পাঠকরা সহজেই অনুমান করতে পারবেন। যেহেতু অনলাইনে ব‌ইটি পাওয়া যায়, তাই সুবোধ দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব‌ইটা সংগ্রহ করলাম।

বিশ্বকাপ নিয়ে সুবোধ বাবুর লেখা বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন প্রাক্তন ফুটবলার তোসেন বরা। যিনি সুবোধ মল্লবরুয়াকে একজন সৎ, সাহসী ও গতিশাল ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলেই অলিম্পিক কভার করেই বিশ্বকাপে ছুটলেন তিনি। এসে ব‌ই‌ও লিখে ফেললেন। 
ফুটবলের প্রতি তাঁর যে অমোঘ প্রেম রয়েছে, সেটা বইয়ের শুরুতে স্বীকার করে নিয়েছেন লেখক। সেই প্রেমই তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে কাতার। শিল্পসমৃদ্ধ ফুটবল দেখে তিনি লাভ করেছেন স্বর্গীয় উপলব্ধি। বিশ্বকাপের মঞ্চে না গেলে ক্রীড়া সাংবাদিকতা অপূর্ণ থেকে যেতো।
বইটিতে মোট ৪৩টি প্রতিবেদন রয়েছে। আছে কাতার বিশ্বকাপের বিভিন্ন ছবি। সেগুলি নিছক ছবিই নয়, সমযের দলিল। তবে ছবির সঙ্গে ক্যাপশন না থাকায় একটু অপূর্ণতা থেকে গেছে। সেটা লেখক হয়তো পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে নেবেন। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে এশিয়া, আফ্রিকার উত্থানের কথা, তেমনি বাদ যায়নি মেসি-এমবাপে সহ তারকা খেলোয়াড়দের ফুটবল নৈপুণ্যের কথাও।

আলাদিনের প্রদীপের মতো হায়া কার্ড কীভাবে অনেকটা মুশকিল আসান হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় প্রতিবেদনে এর উল্লেখ করেছেন লেখক।  ফ্যন ফেস্টিভ্যালের কথা উল্লেখ করলেন তিন নম্বর প্রতিবেদনে। শিরোনাম দিয়েছেন‘ফেন ফেস্টিভেলত জীবন, অথর্ব আরু সার্থক’। ‘সেনসরি রূমর কথারেয দুলাল মানকীর সুরর জগতলৈ’, ‘ভিলাজিঅর কথা, নারব কথা, স্বেচ্ছাসেবকের মনের কথা’, ‘পেলের মাধুরি, ব্রাজিলের অনুরাগী…’ ইত্যাদি শীর্ষক দিয়ে এই মূল্যবান ব‌ইয়ের বিভিন্ন নিবন্ধের কথামালা সাজিয়েছেন লেখক সুবোধ মল্ল বরুয়া। এই ব‌ইটি তাঁকে বাস্তব লেখনীর গল্পকার হিসেবে পরিচিতি এনে দেবে, সেটা নিঃসঙ্কোচে বলা যায়।

‘বেদুইনর পৃৃথিবীত ফুটবলর ঢৌ’-কাতার বিশ্বকাপ দুই মলাটে বাঁধাই করলেন সুবোধ মল্ল বরুয়া 

২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটেছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরবআমিরশাহী, বাহরিন এবং মিশরের। ঘুণে ধরা সম্পর্ক উন্নতি হতে শুরু করে ২০২১ সালে। সব ভেদাভেদ একপাশে রেখে কাতার বিশ্বকাপ এই দেশগুলির রাষ্টপ্রধানকে নিয়ে এসেছে একই প্ল্যাটফর্মে। বেদুইনের সভ্যতায় পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টি লেখক একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন।

কাতারের আর্থসামাজিক জীবনের কথাও উঠে এসেছে  তাঁর প্রতিবেদনে। আবার বিশ্বকাপের পরে পরিকাঠামোর কী হবে তার উল্লেখ রয়েছে তাঁর লেখায়। বিশ্বকাপের পরপরই ভেঙে দেওয়া হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। এ যেন রূপকথার কোন‌ও একটা গল্পের মতো ব্যাপার। সেটাই উল্লেখ করেছেন সুবোধ মল্ল বরুয়া।

বিশ্বকাপের আসরে গিয়ে ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হ‌ওয়ার মূহুর্তের বর্ণনা দিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন শিলচরের ফিফা সহকারী রেফারি মৃণালকান্তি রায়ের বিশ্বকাপ দেখার প্রবল নেশার কথাও। যারা কাতারে যেতে পারেননি, তাদের বিশ্বকাপ দেখার একটা অংশ পূরণ করে দিতে পারে বেদুইনর পৃথিবীত ফুটবলর ঢৌ নামের ব‌ইটি।

সর্ব শেষে উল্লেখনীয় বিষয়ের মধ্যে বইয়ে ” ফুটবলের কথা, ভারতের কথা” শীর্ষক যে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সাংবাদিকতার সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছেন সুবোধ বাবু। তিনি এই প্রতিবেদনে ভারতের ফুটবলের অ্গ্রগতি  বিষয়ে যেমনটা উষ্মা প্রকাশ করেছেন, তেমনি দেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিও খেদ ব্যক্ত করে দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ স্থিতি সম্পর্কেও খোঁচা দিয়েছেন। ১৪০ কোটির ভারতে ১১ জন‌ও ফুটবলার নেই ? সুবোধ বাবুর এই অনুভূতি প্রকাশ প্রকৃতার্থে একজন খাঁটি সাংবাদিকের বলিষ্ঠ ভূমিকা বলে দাবি করে।

Author

Spread the News