১৯টি গ্রাম নিয়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমাবেশ বঙ্গভবনে, গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি
বরাক তরঙ্গ, ১৩ অক্টোবর : কাছাড় জেলার ১৯টি গ্রামকে ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্গত ডিমা হাসাও জেলার স্বশাসিত পার্বত্য পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করার সরকারি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আজ সোমবার বঙ্গভবনে আয়োজিত সমাবেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ তীব্র জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির আহ্বানে এই সমাবেশে সকল বক্তা এই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার হন। আলোচনা শেষে আরও সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার, অসম সরকার এবং ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, তা বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে। তাঁদের যুক্তি, ওই চুক্তিতে কাছাড় জেলা প্রভাবিত হতে চললেও সে সময়কার আলোচনায় এই জেলার কোনও প্রতিনিধিকে সামিল করা হয়নি। ফলে ওই চুক্তি অন্তত কাছাড়ে কোনওভাবেই কার্যকর হতে পারে না। তাদের এই দাবি যতদিন পর্যন্ত মেনে নেওয়া না হবে, ততদিন বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন সংঘটিত করা হবে বলেও এদিনের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে জন্য বরাকবঙ্গের কাছাড় জেলা সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্করকে আহ্বায়ক মনোনীত করে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। তবে জয়পুরে একটি বড় পরিসরে প্রতিবাদী সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এই ইস্যুতে সক্রিয় হতে লিখিত ভাবে অনুরোধ জানানো হবে।
সভায় বিভিন্ন বক্তা এই ইস্যুতে বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়ের অভয়দানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এও বলা হয়, তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে প্রয়োজনে কৌশিক রায়ের মাধ্যমেই সরকারের কাছে ওই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ওই জায়গা থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ কোনও মতেই এই জেলার কাউকে নিজভূমে পরবাসী হতে দেওয়া যায় না।
সঞ্জীব দেব লস্করের সভাপতিত্বে মঞ্চে ছিলেন বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত, লক্ষীপুর আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি সাত্যকি দাস, ক্ষীরোদ কর্মকার, গোপীকা দে ও দিলীপ পানিকা। সমাবেশের শুরুতে দেবলস্কর তাঁর বক্তৃতায় ডিমাসা ও বাঙালির সম্পর্ক যে শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি ওই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির সম্ভাব্য পরিণতি ও আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেন।
পয়লাপুল নেহরু কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবিদ রাজা মজুমদার জানান, এই অঞ্চলে ছোট-বড় ৯৬টি ভাষা রয়েছে। কোথাও কোনও বিভেদ নেই। মণিপুরি সংগঠক এম শান্তিকুমার সিংহ বলেন, ষষ্ঠ তফশিলের সকল সুবিধা ওই অঞ্চলে বসবাসকারীরাই এখনও পায়নি। ফলে একে সম্প্রসারণের প্রয়োজন নেই। তবু ওই ১৯ গ্রামে বসবাসকারী জনজাতিদের সরকার অতিরিক্ত সুবিধে দিতে চাইলে কাছাড়ে রেখেও তা দেওয়া সম্ভব। সে জন্য হস্তান্তরের প্রস্তাব আসে কেন। এর বিরুদ্ধে তিনি গণজাগরণের প্রস্তাব দেন।
বরাক বঙ্গের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা স্পষ্ট করেন, ইস্যুটি মোটেও দুই জনগোষ্ঠীর নয়। কারণ ডিমাসাদেরও অনেকে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে দিতে চাইছে। বার্তালিপির সম্পাদক অরিজিত আদিত্য বলেন, আমরা বিভাজন চাই না, এই কথাই সরকারকে জানানো প্রয়োজন। সঠিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায়ই ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে বরাক উপত্যকার দুটি বিধানসভা আসন কেটে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে এই ইস্যুতে সকলকে সতর্ক করে দেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রমাপ্রসাদ বিশ্বাস আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রদীপ পাল, বিমল দেব, ক্ষীরোদ কর্মকার, গোপীকা দে, প্রদীপ দে, রতন কাহার, সাধন পুরকায়স্থ, পরমেশ্বর রাজবংশী, সঞ্জীব রায়, কার্তিক রায়, সাবিত্রী সিংহ, সুমন্ত ভট্টাচার্য, দশরথ গোয়লা, দুলাল মিত্র, সমরজিৎ সিনহা, অনিল পাল, দীপক সেনগুপ্ত প্রমুখ।
আদিবাসী সমাজ সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের উপস্থিতিতে এ যে প্রকৃত অর্থেই বহুভাষিক সমাবেশ হয়ে উঠেছে, সে কথা উল্লেখ করে তাঁরা আশা ব্যক্ত করেন, শীঘ্রই গণআন্দোলন গড়ে উঠবে এবং ওই আন্দোলনের চাপে সরকার ওই চুক্তি প্রত্যাহারে বাধ্য হবে ।