শ্রীভূমি জেলার রাতারাতিতে দেখা মিললো ৩০ হাত লম্বা পরজীবী কৃমি, চাঞ্চল্যে গোটা এলাকা!

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১ আগস্ট : রাতারাতি বিধানসভা কেন্দ্রের বিদ্যানগর এলাকা যেন হঠাৎ করেই রূপ নিল এক রহস্যময় ঘটনার মঞ্চে। এলাকাবাসী তখনও ভাবতে পারেনি যে এক শান্ত দুপুরে তাদের স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করবে এমন এক জীব, যা দেখে আতঙ্ক, বিস্ময় আর কৌতূহলের এক অভাবনীয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

ঘটনাটি ঘটে লক্ষীন্দর রায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ির আঙিনায়। হঠাৎই দেখা যায় একটি প্রায় ৩০ হাত লম্বা সাপের মতো দেখতে একটি জীব—যা স্বাভাবিক চোখে দেখে যে কেউই সাপ মনে করবে। দেখতে লম্বাটে, সরু ও ধীরে ধীরে নড়াচড়া করছে। মুহূর্তের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রটে যায় এই ‘সাপ’–এর খবরে। আশপাশের লোকজন ছুটে আসে, কেউ ভয়ে দূরে সরে যায়, কেউ আবার মোবাইল ফোনে ধারণ করে সেই দৃশ্য।

তবে স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ও জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায়, এটি আদৌ সাপ নয়। এই রহস্যময় জীবটির আসল পরিচয় হলো Horsehair Worm – এক ধরনের বিরল ও লম্বা কৃমি। বৈজ্ঞানিকভাবে এদের বলা হয় Nematomorpha শ্রেণির অন্তর্গত।

এখন প্রশ্ন হল কী এই Horsehair Worm? জানা গেছে Horsehair Worm বা ঘোড়ার লোমের মতো কৃমি মূলত পরজীবী স্বভাবে বেঁচে থাকে। এরা মূলত পোকামাকড়, যেমন পিপঁড়ে, পোকা কিংবা ছোট প্রাণীর দেহে ডিম পাড়ে এবং সেখানেই জন্ম নিয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়। দেহচর্চা শেষে এরা জলাশয়ে বেরিয়ে আসে। সেখানেই এদের প্রাপ্তবয়স্ক রূপ দেখা যায়। সাধারণত মানুষের শরীরে বা আশেপাশে ক্ষতি করার মতো কিছুই নেই এদের। এদের জীবনচক্র খুবই জটিল ও বৈজ্ঞানিকভাবে আগ্রহ উদ্রেককারী।

এত দীর্ঘ ও অস্বাভাবিক এক কৃমিকে সরাসরি দেখে সাধারণ মানুষ বিস্মিত। আগে কেউ কখনও এমন কিছুর সম্মুখীন হয়নি। ফলে প্রথমে আতঙ্ক ছড়ালেও পরে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় অনেকেই কৌতূহল নিয়ে জীবটির ভিডিও ধারণ করেন, ছবি তোলেন এবং সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকেন। মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, প্রথমে আমরাও ভেবেছিলাম এটা কোনও অজগর সাপ বা কিছু ভয়ানক জীব হতে পারে। কিন্তু পরে বিস্তারিত জেনে বুঝতে পারলাম এটা একেবারে নিরীহ ও বিরল এক প্রজাতির কৃমি।

আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, Horsehair Worm সম্পূর্ণভাবে নিরীহ এবং মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। তবে এসব কৃমির উপস্থিতি সাধারণত এমনভাবে দেখা যায় না, ফলে হঠাৎ করে একে দেখা গেলে যে কেউই চমকে যেতে পারে। এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে।

প্রাকৃতিক পৃথিবী আজও আমাদের সামনে এমন বহু অজানা রহস্য ও জীব নিয়ে আসে যা আমাদের বিস্মিত করে। রামকৃষ্ণনগরের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, আমরা প্রকৃতির কত অল্পই জানি! সচেতনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও কৌতূহলের সঙ্গে যদি এই সব ঘটনার দিকে তাকানো যায়, তাহলে আতঙ্ক নয় বরং বিস্ময় আর শেখার আগ্রহ জন্ম নেয়।এবং হ্যাঁ, এরকম কিছু দেখা গেলে আতঙ্কিত না হয়ে, প্রথমে নিশ্চিত হোন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Spread the News
error: Content is protected !!