শিলচর ডনবস্কে তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন ইংরেজি হরফে, তোলপাড়
বরাক তরঙ্গ, ১৩ জুন : ডনবস্কো বিদ্যালয়ের শিলচর শাখায় তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইংরেজি হরফে লেখা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সকালে একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে নিন্দা জানান। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা বাংলা ভাষার অবমাননা করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেননি, বরং ছাত্রদের বাংলা ভাষা শেখানো সহজ করে তুলতেই তাদের এই প্রয়াস বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি ফটো চিরঞ্জিত পাল নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তুলে ধরেন। এরপর থেকেই ঝড় উঠে। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা এনিয়ে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন। বেশিরভাগ লোকেরাই বলেছেন এটা এগারো শহিদের রক্তস্নাত বরাক উপত্যকার মাটির অপমান।
শিশুদের জন্য শিক্ষাপদ্ধতি সহজ করতেই এই নিয়ম, ভাষায় অবমাননা নয়: বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
এ দিকে, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। শহিদের রক্তস্নাত শহরে এ ধরনের ঘটনার নিন্দনীয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এমন অদ্ভুত কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজে উদ্বিগ্ন মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি। সমিতির সদস্যরা স্কুলকর্তৃপক্ষের কাছে এই অবাঞ্ছিত ত্রুটির জন্য বিভাগীয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেন সেটা লক্ষ্য করে আগামী সপ্তাহে সমিতি পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান অভিজিৎ চক্রবর্তী।
শিলচরের ডনবস্কো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এআইডিএসও’র কাছাড় জেলা কমিটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় বলা হয় যে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এধরনের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত। ডনবস্কো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়।
এ দিকে, বিদ্যালয়ের তরফে ফাদার সুরজিৎ টিক্কা বলেন, ‘আগে চতুর্থ শ্রেণীর পর বাংলা পড়ানো হতো, তবে আমরা সম্প্রতি তৃতীয় ক্লাস থেকেই বাংলা পড়াতে শুরু করেছি। ইংরেজি এবং হিন্দি সবাই পড়ে, তবে মাতৃভাষা নিতে অনেকের অনীহা রয়েছে। আমরা প্রায় জোর করেই তাদের বাংলা পড়তে বাধ্য করছি। তবে শুধু একটা বিষয় চাপিয়ে দিলে হয় না, ছাত্র-ছাত্রীদের দিকটাও দেখতে হয়। ক্লাসে বাংলা হরফেই পড়ানো হয় তবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে এত ছোট ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় ভয় পেয়ে যায়। তাই আমরা বিষয়টির সহজ করতে তাদের প্রশ্নপত্র ইংরেজি হরফে করেছি। এটা শুধুমাত্র তৃতীয় শ্রেণীর জন্যই, চতুর্থ শ্রেণী থেকে তারা বাংলাতেই প্রশ্নপত্র পায় এবং বাংলাতে উত্তর দেয়।