প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে পাথারকান্দিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন শারদোৎসব
সরকারি মতে ২৪৩টি পুজো অনুষ্ঠিত____
মোহাম্মদ জনি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ১৪ অক্টোবর : বৃষ্টি ভেজা মহাষষ্ঠী থেকে নবমী। তারপরও প্রকৃতির মেঘলা আবহাওয়াকে তুড়ি মেরে দশমীতে ভাসানের মধ্য দিয়ে রীতিমত এক শান্তির আবহে এবারের শারদোৎসব পালিত হল পাথারকান্দিতে। মহাষষ্ঠী থেকে দশমীর ভাসানপর্ব এই চারদিনই আনন্দের বন্যায় ভাসলেন বৃহত্তর পাথারকান্দিবাসী। শরৎ ঋতুতে ও মেঘের গর্জন আর ভারী বর্ষণকে উপেক্ষা করে গ্রাম-শহরের প্রতিটি অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ এই উৎসবের আনন্দে ঘা ভাসালেন। পুজোর চারদিন বৃহত্তর পাথারকান্দি সার্কেলের অধীনে তেমন কোন বড় অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সর্বত্রই পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রতিটি প্রান্তেই এই পুজোকে ঘিরে ছিল অভূতপূর্ব খুশির বাতাবরণ। শারদোৎসবের সব চাইতে বেশি ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে মহানবমীর রাতে। বিকেল থেকেই নতুন সাজে শহরজুড়ে হরেক রকম আলোর রোশনায় ঘর ছেড়ে মণ্ডপমুখী হতে দেখা যায় হাজার হাজার দশর্নার্থীদের। প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, পাথারকান্দি সার্কলের অধীন এবার পাথারকান্দি ও বাজারিছড়া থানা এলাকায় ছোটবড় মিলিয়ে মোট ২৪৩টি পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ভাসানপর্বে সার্কল অফিসার বলীন বাবা বালারি জানান। তিনি জানান, তাঁদের পরিসংখ্যান মতে এরমধ্যে পাথারকান্দি থানা এলাকার অধীন ১২৩ ও বাজারিছড়া থানার অধীন ১২০টি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। পুজোকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর এলাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে সার্কল অফিসার সংবাদ মাধ্যমকে জানান।
এবার পাথারকান্দি শহর এলাকার টাউন কালীবাড়ি ও শিববাড়ি সর্বজনীন দুর্গাপুজো ছাড়াও কয়েকটি অন্যতম পুজো হচ্ছে উত্তর রেলওয়ে গেট সংলগ্ন অমরজ্যোতি ক্লাবের পুজো, মধ্য পাথারকান্দি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি, উত্তর পাথারকান্দি মহিলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি, মধ্যবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি, প্রতাপগড় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি, থানারোডের পঞ্চশিখা ক্লাব নবারুণের পুজো ছাড়া ও দক্ষিণ পাথারকান্দির সর্বজনীন দুর্গাপুজো। তবে গত দুবছরের করোনা আতঙ্ক সহ আর্থিক মন্দাভাবের কাটিয়ে সদ্য ঘোষিত সমজেলার ছোট্ট এই শহরে এবার দু-একটি সর্বজনীন পুজো কমিটি মণ্ডপ সজ্জায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। এমনকি অধিকাংশ পুজো কমিটির ছোট আকৃতির প্রতিমাগুলো অনেকের নজর কাড়ে। পুজোকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে পুলিশি নজরদারি ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পুজো উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি অসম-ত্রিপুরার ৮ নং জাতীয় সড়ক ঘেঁষা ব্যস্ততম শহর এলাকার উত্তর থেকে দক্ষিণে নো-এন্ট্রি বলবৎ করা হয়। শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ছোটবড় সবধরণের যানবাহনকে।
এদিকে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে এবার নবমী ও দশমী তিথি একই দিনে হওয়ায় দশমী নিয়ে গ্যাড়াকলে পড়তে হয় একাংশ সনাতনীদের। তাই স্বাভাবিকভাবে শনি ও রবিবার সেই সকাল থেকেই প্রতিটি পুজো মণ্ডপে বিদায়ের আয়োজনের পাশাপাশি সিঁদুর খেলায় মত্ত হয়ে উঠেন ঘরের মহিলারা। তিথি মতে বেশকিছু প্রতিমা শনিবার সন্ধ্যায় লঙ্গাইর বিসর্জনঘাটে ভাসানপর্ব সারতে দেখা যায়। একইভাবে পরদিন দশমীর সন্ধ্যায় পাথারকান্দি মধ্যবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির প্রতিমা ব্যাতিত পাথারকান্দি ও তাঁর আশপাশের প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশটি দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বিশাল এক শোভাযাত্রা সহকারে পা মেলান মায়ের অজস্র ভক্তরা। মায়ের বিদায় বেলা বিষাদের যন্ত্রনাকে ভুলে গিয়ে লাল-নীল আবির মেখে উচ্চঃস্বরে মাইকের গানের সুরে কোমর দোলাতে দেখা গেছে সাত থেকে ষাটের লোকদেরও।
লঙ্গাই নদীর বিসর্জন ঘাটে শিববাড়ি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি দশ মাথা যুক্ত রাবণের কুশপুতুল জ্বালিয়ে অশুভ শক্তির বিনাসের মধ্য দিয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট লঙ্গাই নদীর বিসর্জন ঘাটে এদিন পর্যাপ্ত পরিমাণের আলো, নিরাপত্তা কর্মী, ইঞ্জিনচালিত নৌকা সহ এসডিআরএফ বাহিনী, দমকল কর্মীর পাশাপাশি জরুরিকালীন পরিষেবার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার মত সবধরণের ব্যবস্থা ছিল। দশমীর সন্ধ্যা থেকে সার্কল অফিসার বলীন বাবা বালারী থানার ইন্সপেক্টর ওসি সোমেশ্বর কানোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বিসর্জন ঘাটে দাঁড়িয়ে থেকে ভাসানপর্ব সুন্দর সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেন। এর আগে নবমীর বিকেলে বিসর্জন ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ছুটে আসেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। সে সময় তিনি স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরের কর্মকর্তাদের মূর্তি ভাসান পর্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভাষানপর্ব সম্পন্ন করতে পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জনান।
মহা নবমীর দিন উপলক্ষে পাথারকান্দি মণ্ডল বিজেপির সহ-সভাপতি নবকুমার সিনহার ঘরে মায়ের আশীর্বাদ গ্রহণ করছেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। তিনি দলীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে পুজো মণ্ডপও পরিদর্শন করেন বিধায়ক।