এসবিআই সোনাই শাখা স্থাপনের পেছনে রয়েছে সংগ্রামী ইতিহাস

বরাক তরঙ্গ, ৯ জুন, সোমবার,
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার সরকারি অনুদান থেকে লেনদেনের বেশি অংশ ব্যাঙ্কিং পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এতে গ্রামের অতি মানুষ যাঁদের পড়াশোনা নেই বললে চলে তাঁরাও এখন ব্যাঙ্কমুখি হতে হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলোতে তাঁরা বাধ্য হয়ে ভিড় করেন। কিন্তু ব্যাঙ্কে যাওয়ার পর কিছু কর্মীদের পাল্লায় পড়ে ঘুরপাক খেতে হয় তাদের। তাঁরা পান না যথার্থ মর্যাদা। এক অবহেলায় পড়ে থাকেন। এমন বাস্তব দৃশ্য গ্রামাঞ্চলের থাকা প্রায় ব্যাঙ্কে (সব ব্যাঙ্কে নয়) পরিলক্ষিত হয়। এমন কাজে পিছিয়ে নয় এসবিআই-র সোনাই শাখাও। সেখানে সাধারণ গ্রাহকরা পরিসেবা পাওয়া থেকে প্রায় বঞ্চিত থাকেন। এক একটি কাজের জন্য মাসদিন ব্যাঙ্কে দৌঁড়াতে হয়। ব্যাঙ্ক কর্মীরা গ্রাহকদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেন তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। সাধারণত কেওয়াইসি জমা দিতে গেলে এক এক দিন এক একটি ফরমান দেন কাউন্টারে থাকা কর্মী। এতে সাধারণ গ্রাহকের তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মায়।

সম্প্রতি এসবিআই শাখায় মদ্যপানের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা শুধু ব্যাংকের শাখা নয় গোটা সোনাইকে লজ্জিত করেছে। দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করে দলিল রাখার রুমে গিয়ে যেভাবে আড্ডা জমিয়ে মদ পান করছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরা সত্যি নিন্দনীয়। প্রশ্ন জাগে ব্যাঙ্ক কর্মীরা এ কাণ্ডের সাহস কোথায় থেকে পেলো। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তা কী জানেন না এমনও প্রশ্ন উকি মারছে। কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর জন্য বারবার সোনাই এসবিআই শাখা লজ্জিত হচ্ছে। বছর দিন আগে সোনাবাড়িঘাট  জিপির আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে এক কর্মী অভদ্র আচরণ করেন। এরপর ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। এভাবে বহু ঘটনা রয়েছে কয়েকজন কর্মীর।

সোনাই এসবিআই শাখার পেছনে সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই শাখা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এমনি এমনি স্থাপন করেনি। ১৯৮০ সালে সোনাইয়ের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখা স্থাপনের দাবি ছিল। এই দাবিতে সোনাইয়ের সচেতনমহল ও বিভিন্ন সংগঠন ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যায়। ২০০৮ সালে সোনাইয়ের অগ্রণী সংস্থা ইয়ংম্যান সোসাইটি আন্দোলনকে জোরদার করে তুলে। তাদের আরও একটি দাবি ছিল সোনাইকে সাব ডিভিশন হিসেবে ঘোষণা করা। ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাঙ্কের শাখা স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় ইয়ংম্যান সোসাইটি। সোনাইয়ে আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ইউবিআই-র শাখা ছিল। তাই আন্দোলন জোরদার করতে হয়েছে সোসাইটির। আর এ ক্ষেত্রে তৎকালীন বিধায়ক এনামুল হকের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বৃহত্তর সোনাইবাসীর স্বার্থে এই আন্দোলনে তিনিও যোগ দেন। ২০১৫ সালে এসবিআই সোনাই শাখা স্থাপন হয়। এবং বিধায়ক এনামুল হক আনুষ্ঠানিক ভাবে তার যাত্রা শুরু করেন। আর বৃহত্তর সোনাইবাসীর স্বপ্ন সাকার হয়। এসবিআই অ্যাকাউন্টের জন্য শিলচর বা কাবুগঞ্জে আর যেতে হবে না। সেখানে যারা সেই সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন এমন এক আশা ছিল। এরপর কয়েবছর সোনাই সাধারণ মানুষ এর সুবিধা ভোগ করলেও পরবর্তীতে অন্যরূপ নেয়। শুরু হয় গ্রামের সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা। শেষমেশ মদের আড্ডায় পরিণত হল। 

Spread the News
error: Content is protected !!