অবসরপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক শেখররঞ্জন দেবকে সম্মাননা প্রাক্তনীদের

যুব সমাজের কল্যাণে কাজের প্রস্তাব

ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৫ এপ্রিল : ভারত সরকারের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা নেহরু যুব কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর শেখররঞ্জন দেবকে সম্মানিত করল তার প্রাক্তন গুনমুগ্ধরা। রবিবার শেখরবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এক ঘরোয়া সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জেলার বিভিন্ন সংগঠনের বরিষ্ঠ কর্মকর্তা ও  এনওয়াইকেএস-এর  প্রাক্তন ভলান্টিয়াররা। প্রাক্তন স্বেচ্ছাসেবক বিশ্বজিৎ দাশগুপ্তের শিলচর সেকেন্ড লিংক রোডস্থিত বাসভবনে এ উপলক্ষে সভার আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ বছরের জেলা যুব সংযোজক ও পরবর্তী সময়ে ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ওএসডি হিসেবে কাজ করার পর সম্প্রতি কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন শেখর রঞ্জন দেব। শেখরবাবু ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘবছর কাছাড়ে কাজ করেছেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্লাব, সংগঠনের মাধ্যমে যুবক যুবতীদের কর্মঠ করে তোলার প্রয়াস করেছেন। দক্ষতার পাঠ শিখিয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর নেহরু যুব কেন্দ্রের মাধ্যমে। ফলে তখনকার এন ওয়াই কে -তে কাজ করা যুবক যুবতীরা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, শ্রীভূমি, হাইলাকান্দি সহ উদালগুড়ি ও অন্যান্য স্থানে জেলা যুব সংযোজক তথা ডিস্ট্রিক্ট ইয়ুথ অফিসার পদে অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত কাজ করে সুনাম কুড়িছেন তিনি। বিশেষ করে সুষ্ঠু ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে যুব সমাজকে সঠিক পথ প্রদর্শন করাই হচ্ছে নেহরু যুব কেন্দ্রের গুরু দায়িত্ব। আর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন বলেই এদিন একজোট হন তার গুণমুগ্ধরা।

উল্লেখ্য, শেখররঞ্জন দেবের সহধর্মীনী শ্বাশতী দেবও একই পদে সুনামের সঙ্গে বরাক উপত্যকার তিন জেলা সহ অসমের বিভিন্ন জেলায় কাজ করে বছর খানেক আগে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করেছেন। শেখরবাবু গত ৩১ জানুয়ারি উদালগুড়ি থেকে অবসর গ্রহণ করে শিলচরে ফিরে আসার সময়েও সেখানকার সুশীল সমাজ তাঁকে শ্রদ্ধাচিত্তে বিদায় জানিয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক শেখররঞ্জন দেবকে সম্মাননা প্রাক্তনীদের


এদিন শেখরবাবুর গুণমুগ্ধরা তাঁর স্পর্শ ও আশীর্বাদ আদায় সহ তাঁর অবসর জীবন সুস্থ ও সুন্দরভাবে অতিক্রমণের প্রার্থনা জানাতে এই সম্মাননার আয়োজন করেন। শুরুতে সস্ত্রীক শেখর রঞ্জন দেবকে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করেন গুণমুগ্ধরা। পরে পুষ্পস্তবক, স্মারক ও মানপত্র তুলে দিয়ে সম্মাননা জানান এনওয়াইকেএস-এর প্রাক্তন ভলান্টিয়ারবৃন্দ। মানপত্র পাঠ করে শোনান তপা দাস। এক্স ভলান্টিয়ার তথা কাটিগড়ার সিদ্ধেশ্বর প্রগতি সংঘের কর্মকর্তা দিব্যজ্যোতি দাস শুরুতে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, শেখর স্যারের সঠিক মেন্টরশিপের দরুণ আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্বশীল পদে কর্মরত রয়েছেন বহু যুবক যুবতী।  তাই  আগামী দিনে একইভাবে যুবসমাজকে সঠিক দিশা দেখাতে নতুন কোনো ফোরাম তৈরির পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন দিব্যজ্যোতি দাস।

অপর বক্তা মণিয়ারখাল টি-ইয়ুথ ক্লাবের বিশ্বজিৎ দেবরায় বলেন, প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কল্যাণে সুসংগঠিত অবস্থায় কাজ করার কৌশল প্রক্রিয়া হাতে কলমে শিখিয়েছেন শেখর স্যার। স্কুল কলেজের শিক্ষার বাহিরের বাস্তব জীবনের শিক্ষা প্রদান করেছে নেহরু যুব কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। আর এক্ষেত্রে বিভাগীয় কাজ যথার্থভাবে পালন করে অসংখ্য যুবক যুবতীর জীবনের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন শেখর স্যার।
কিশলয় দাস বলেন , এনওয়াইকে হচ্ছে যুব সমাজের জীবনের ভিত্তি তৈরি করার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানের আধিকারিক হিসেবে শেখর স্যার  আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এবারে এনওয়াইকেএস-এর প্রাক্তনীদের নিয়ে নতুন একটি প্লাটফর্ম গড়ে সমাজের কল্যাণে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন কিশোলয় দাস।

অনুষ্ঠানের অপর বক্তা ইকবাল বাহার লস্কর বলেন, প্রত্যন্ত  গ্রাামাঞ্চলের যুব সমাজকে উজ্জীবিত করে তোলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন স্যার। তখনকার সময়ের পিছপড়া কাপ্তানপুর ১৮ খণ্ড গ্রামে কাপ্তানপুর স্টার ক্লাবের অধীনে তাঁরই উদ্দোগে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়। দেবদুলাল দেব বলেন, শ্রীগৌরিতে চৈতালী সংঘ নামক একটি ক্লাব ছিল। একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে সংঘের তরফে অংশগ্রণ করতে পেরে নিজের জীবনের চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন ঘটে।

অবসরপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক শেখররঞ্জন দেবকে সম্মাননা প্রাক্তনীদের

অনুষ্ঠানের মধ্যমণি অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর শেখর রঞ্জন দেব নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, কর্মজীবনে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কখনো আপস রাখেননি। অনেক সময়ে তাঁকে কঠোর হতে হয়েছে। এতোকিছুর পরেও তাঁর কাজকর্ম অনুসরণের জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। আগামী দিনে প্রাক্তন এনওয়াইকে ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে মত বিনিময় তথা গঠনমূলক শলা পরামর্শের আদান প্রদানের জন্য নিজের বাসভবনে একটি কক্ষ মুক্ত রাখবেন বলে জানান শেখর রঞ্জন দেব। প্রাক্তন ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে এডভোকেসি প্রোগ্রাম পরিচালিত করার পক্ষে  মত প্রকাশ করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বজিৎ দাশগুপ্ত, আবুল হোসেন বড়ভূইয়া, অনুপম দেব, রমা চক্রবর্তী, তপা দাস, লাখি নাগ, মানিক পাল, বিশ্বজিৎ নাথ সহ অন্যান্যরা।

Author

Spread the News