পুথনি চা-বাগানে প্রথমবারের মতো রাবণ দহন ও সঙ্গীতানুষ্ঠান

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৪ অক্টোবর : বিজয়া দশমী মানেই ধর্মের জয়গান, অশুভের বিনাশ আর আনন্দে ভরা সামাজিক উৎসব। এই ঐতিহ্যকেই সামনে রেখে এবছর পাথারকান্দির প্রত্যন্ত পুথনি চা-বাগান প্রথমবার আয়োজন করল রাবণ দহন ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। বরাক চা যুব কল্যাণ সমিতি, বাগান পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এই মহা-আয়োজন বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়

বিজয়া দশমীর বিকেলে পুথনি চা-বাগানের মাঠে বিশাল আকারের রাবণের পুতুল দাঁড় করানো হয়। হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী কায়দায় ধনুক থেকে তীর নিক্ষেপ করে অগ্নি সংযোগ করেন বরাক চা যুব কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সভাপতি শচীন সাহু। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হতে থাকে রাবণের প্রতিকৃতি। দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস, করতালি আর উল্লাসধ্বনি।

এটাই ছিল পুথনি চা-বাগানে প্রথম রাবণ দহন অনুষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দা, শ্রমিক সমাজ ও নানা বয়সী মানুষেরা এই আয়োজনকে সাদরে গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের প্রাণপুরুষ শচীন সাহু ও তাঁর সহকর্মীদের সকলেই ভুয়সী প্রশংসা করেন। অনেকে বলেন, “এমন আয়োজন আগে কখনো হয়নি, সত্যিই চা বাগান এলাকায় নতুন মাত্রা যোগ করল এই অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠান শেষে শচীন সাহু বলেন, যুগে যুগে ধর্মের জয় হয়েছে, অধর্ম পরাজিত হয়েছে। রাবণ দহন সেই চিরন্তন সত্যের প্রতীক। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা শুধু বিনোদন দিচ্ছি না, সমাজকে বার্তা দিচ্ছি যে অশুভ যেভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, একদিন তার পরাজয় হবেই।

অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রাবণ দহনের পর শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ঢাক-ঢোল, আলোয় সাজানো মাঠ, আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মিলিয়ে পুথনি চা বাগান যেন পরিণত হয় উৎসবের মেলায়।

এই অনুষ্ঠান শুধু একটি বিনোদনমূলক আয়োজন নয়, বরং সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিল। বাগানের সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে শিশু, মহিলা, যুবক— সকলে সমানভাবে অংশ নিলেন এই আনন্দে। ধর্ম ও সংস্কৃতির এই মেলবন্ধন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সামাজিক জীবনে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

Spread the News
error: Content is protected !!