“জনসেবা কোনও পেশা নয়, এটি এক ব্রত” কাছাড়ে লোক কল্যাণ দিবসে জেলা আয়ুক্তের দৃঢ় বার্তা
তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও লোক সেবা পুরস্কার প্রদান
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৫ আগস্ট : “লোক কল্যাণ দিবস শুধুমাত্র একটি প্রতীকী দিবস নয়, এটি আমাদের হৃদয় থেকে জনসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার ডাক,” এমনই মন্তব্য করে কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব। মঙ্গলবার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেন জেলা পর্যায়ে লোক কল্যাণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে কাছাড় জেলা প্রশাসনের ননবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, “জনসেবা কোনও চাকরি নয়, এটি এক ব্রত,একটি অঙ্গীকার, যার মাধ্যমে মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায় নিষ্ঠা, মানবিকতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে।”
তিনি বলেন, লোক কল্যাণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রশাসনের মৌলিক দায়িত্ব হলো সর্বসাধারণ, বিশেষ করে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি উপস্থিত সকল সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্দীপনামূলক আহ্বান জানান, তাঁরা যেন তাদের প্রতিটি কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেন এবং প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাসকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করান।
তিনি উল্লেখ করেন, অসম সরকারের ‘লোক সেবা পুরস্কার’ শুধুমাত্র কোনও সম্মান নয়, এটি হচ্ছে কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা ও জনভরসার প্রতীক। যারা নীরবে-নিভৃতে নিজেদের কাজ করে চলেছেন, তাঁদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসন একটি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত হেমাঙ্গ নবীস, যিনি লোক কল্যাণ দিবসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্মরণ করান লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈর জীবনদর্শনের কথা। তিনি বলেন, গোপীনাথ বরদলৈ ছিলেন শুধু একজন নেতাই নয়, ছিলেন জাতির অভিভাবক। একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী, অন্যদিকে প্রশাসনিক দূরদর্শিতার অধিকারী বরদলৈ অসমের সামাজিক ঐক্য ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ছিলেন আপসহীন। বিভাজনের কঠিন সময়ে অসমকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান আজও ইতিহাসে গৌরবের সাথে উচ্চারিত হয়।ও
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের সামনে গোপীনাথ বরদলৈর জীবন ও অবদান নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম, নেতৃত্বগুণ, শিক্ষা, মানবিকতা ও আদর্শ তুলে ধরা হয়। তথ্যচিত্রটি দর্শকদের বিশেষ করে তরুণ অফিসারদের মধ্যে এক গভীর আবেগ ও সচেতনতা সৃষ্টি করে। বরদলৈর নিরহঙ্কার নেতৃত্ব ও নীরব আত্মত্যাগ প্রশাসনিক কাজের আদর্শ হয়ে ওঠে নতুন প্রজন্মের কাছে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ‘লোক সেবা পুরস্কার’ প্রদান। এই পুরস্কার ২০২৫ সালের জন্য কাছাড় জেলা প্রশাসনের অধীন নিরলস ও নিষ্ঠাবান কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয় চারজন কর্মচারীকে। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, জ্যেষ্ঠ জেলা প্রশাসনিক সহায়কদ্বয়, বিক্রমজিৎ চক্রবর্তী, তুষারকান্তি দে, দপ্তরী আনন্দ দাস এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক কার্যালয়ের বরিষ্ঠ সহায়ক হেমাঙ্গ বড়ো। তাঁদের প্রত্যেককে ২৫,০০০ টাকার নগদ অর্থ ও এক বছরের চাকরি বৃদ্ধির সুবিধা প্রদান করা হয়।
এই পুরস্কার পাওয়ার পর বিক্রমজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “এই সম্মান আমাদের কাজে আরও নিষ্ঠা আনে। আমরা চেষ্টা করব এই বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রাখতে।” তুষার কান্তি দে বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, এটি সকল সাধারণ কর্মচারীর নিঃশব্দ পরিশ্রমের সম্মান।” অন্য দুই পুরস্কারপ্রাপ্ত আনন্দ দাস ও হেমাঙ্গ বড়োও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ভবিষ্যতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত উপ -সঞ্চালক তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর দীপা দাস। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিপ্লব বিশ্বাস।