প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার প্ৰত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের

বরাক তরঙ্গ, ২০ জুন : প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার প্ৰত্যাহারের দাবিতে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গোটা দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে একটি স্মারকপত্ৰ রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রীর এপিডিসিএল এর শিলচর ডিভিশন-২ এর এজিএম মারফত প্রেরণ করা হয়। শুক্রবার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে দীপঙ্কর চন্দ, মধুসূদন কর, মানস দাস, কমল চক্রবর্তী, পরিতোষ ভট্টাচাৰ্য, রঞ্জিত চৌধুরী, অঞ্জন কুমার চন্দ, খাদেজা বেগম লস্কর, গৌরচন্দ্র দাস প্রমুখ শিলচরের পানপট্টিস্থিত এপিডিসিএল কার্যালয়ে বেলা এগারোটায় উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্মারকপত্রের প্রতিলিপি এজিএম এর হাতে তুলে দেন।

এছাড়াও সংগঠনের ধোয়ারবন্দ আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে বড়জালেঙ্গা ব্লকের বিডিও কাছে স্মারকপত্ৰ তুলে দেওয়া হয়। আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহনলাল মালা সহ দিলীপকুমার রী, সম্পা দে, দিলীপ কালোয়ার প্রমুখ সহ সংগ্রামী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংগঠনের কালাইন আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সামসুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এপিডিসিএল এর কালাইন সাব ডিভিশনের এসডিই নিকট স্মারকপত্ৰ প্রদান করেন।

প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার প্ৰত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের

শিলচরে স্মারকপত্র প্রদানের পূর্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলাকালে সংগঠনের অন্যতম সদস্য দীপঙ্কর চন্দ বলেন, অসমের জনসাধারণ শুরু থেকেই প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটারের বিরোধিতা করে আসছে। স্মাৰ্ট মিটারের বিরুদ্ধে আসামের সৰ্বত্ৰ তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের প্ৰতিটি স্থানে স্মাৰ্ট মিটারের বিরুদ্ধে জনসাধারণ স্বত:স্ফূৰ্ত ভাবে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন অল আসাম ইলেকট্ৰিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত দু’বছর ধরে এই স্মাৰ্ট মিটার বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছে। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে যে, জনগণের তীব্ৰ বিরোধিতাকে গায়ের জোরে অগ্ৰাহ্য করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার একমাত্ৰ কৰ্পোরেট গোষ্ঠীর স্বাৰ্থে এই স্মাৰ্ট মিটার বসাচ্ছে। বৰ্তমানেও ডিজিটাল মিটার সম্পৰ্কে জনগণের কোনও অভিযোগ নেই। অথচ বেসরকারি কোম্পানির লোকজন ঘরে ঘরে গিয়ে নানা ধরনের ভয় ভীতি দেখিয়ে ছলে বলে কৌশলে গ্ৰাহকদের মতামত না নিয়েই ডিজিটাল মিটার খুলে বিতৰ্কিত স্মাৰ্ট মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে। তিনি এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান।

প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার প্ৰত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের

সংগঠনের অন্যতম সংগঠক মানস দাস বলেন, বৰ্তমানে প্ৰচলিত ডিজিটাল মিটারগুলো যেখানে একশ শতাংশ শুদ্ধ ও সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাপে সক্ষম সেখানে লক্ষ লক্ষ ডিজিটাল মিটার ঘর থেকে খুলে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে জনসাধারণের ট্যাক্সের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই প্ৰিপ্ৰেইড মিটার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে একমাত্র কর্পোরেটদের হাতে ভবিষ্যতে বিদ্যূৎ খণ্ডকে তুলে দেওয়ার স্বার্থে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে এই স্মাৰ্ট মিটার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে বলে সরকার প্ৰচার করছে অথচ বিতরণ ব্যবস্থার অন্যান্য সরঞ্জাম যেমন পুরোনো ট্ৰান্সফরমার, পুরনো বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ইত্যাদির কোনো আধুনিকীকরণ না করে শুধু স্মাৰ্ট মিটার বসানো হচ্ছে। এরফলে আজও সামান্য বৃষ্টি বা হালকা হাওয়া বইলেই বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। তিনি বলেন ইতিমধ্যে সমগ্ৰ রাজ্যে অসংখ্য অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে যে, যাদের ঘরে বা অন্য প্রতিষ্ঠানে স্মাৰ্ট মিটার বসানো হয়েছে, তাঁদের বিদ্যুৎ বিল আগের থেকে ৩/৪ গুণ বেশি দিতে হচ্ছে। একজন গ্ৰাহককে একই ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে ডিজিটাল মিটার সরিয়ে স্মাৰ্ট মিটার বসানোর পর কেন এত বেশি বিল দিতে হচ্ছে এর কোন সদুত্তর কর্তৃপক্ষের কাছে নেই! তিনি প্রিপেইড স্মাৰ্ট মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মধূসুদন কর বলেন প্রিপেইড স্মাৰ্ট মিটারের ক্ষেত্রে যেহেতু অগ্রিম রিচার্জ করতে হয় ফলে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র গ্ৰাহকদের মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রিপেইড স্মার্ট মিটারে রিচার্জের টাকা (বেলেন্স) শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যা বিদ্যূৎ আইন-২০০৩ এর ৫৬ নং ধারাকে সরাসরি উলঙ্ঘন করে। এই ধারা মতে কোনো গ্ৰাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হলে ন্যূনতম ১৫ দিন আগেই জানাতে হয়। তিনি বলেন, স্মাৰ্ট মিটার চালুর পর গ্ৰাহকদের বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে আগে টাকা জমা দিতে হচ্ছে অথচ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার তাদের লোডশেডিং এও নাকাল হতে হচ্ছে। অগ্রিম টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর ৫৭ (২) ধারার সরাসরি উলঙ্ঘন। তিনি বলেন কেন্দ্ৰীয় সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার প্ৰথমে সরকারি কাৰ্যালয়, বিভিন্ন উদ্যোগিক প্ৰতিষ্ঠানে স্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ অসম সরকার তা না করে সাধারণ গ্ৰাহকদের ঘরে স্মাৰ্ট মিটার প্রতিস্থাপন করছে। তিনি গ্রাহকদের সংঘটিত হতে আহ্বান জানান। বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ও বিদ্যুৎ গ্রাহক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমল চক্রবর্তী, পরিতোষ ভট্টাচাৰ্য,রঞ্জিত চৌধুরী প্রমুখ।

Author

Spread the News